শিরোপা জিততে না পারলেও ব্যাটিং-বোলিংয়ে ভারতের ক্রিকেটাররাই দাপট দেখিয়েছেন। ব্যাটিংয়ে শীর্ষ দুইয়ে তাদের দুজন- বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। এছাড়া সেরা পাঁচের বাকিদের মধ্যে দুজন নিউজিল্যান্ডের এবং আরেকজন দক্ষিণ আফ্রিকার। ব্যাটিংয়ের মতো বোলারদের তালিকাতেও ভারতের দাপট। শীর্ষে মোহাম্মদ শামি ও চতুর্থ যশপ্রীত বুমরাহ। এছাড়া বাকি তিনজন দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার।
শীর্ষ পাঁচ ব্যাটার
ফাইনালের মঞ্চে ৭১১ রান নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। ব্যাট হাতে নামার আগে নিজের ক্রিকেট আইডল শচীন টেন্ডুলকারের কাছ থেকে পান অটোগ্রাফ দেওয়া জার্সি। দল ফাইনালে হারলেও একেবারে খারাপ করেননি কোহলি। রবিবার ৫৪ রানের ইনিংস খেলে ৭৬৫ রানে থামলেন। ৩ সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে ছয়টি হাফ সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শচীনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ম্যাচে করা ১১৭ রান।
কোহলি সদ্যই শেষ হওয়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড গড়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। যেখানে তার ধারেকাছেও নেই কেউ। তার এই রান অদূর ভবিষ্যতে কেউ ভাঙতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ।
শীর্ষ রান সংগ্রাহকের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছেন রোহিত। এই আসরে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়ে আর ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়ে দলকে ফাইনালের মঞ্চে এনে দিতে বড় অবদান তার। প্রতিটি ম্যাচেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গড়ে দেন বড় সংগ্রহের ভিত। অনুপ্রেরণা দেন সাহসী হয়ে উঠার। ফাইনালে তার ব্যাটেই ভালো শুরু পেয়েছিল ভারত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় রান না উঠায় অজিদের বিপক্ষে হারতে হয়েছে দলকে। ১১ ম্যাচে ৫৯৭ রান নিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করেছেন তিনি। একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে তিনটি হাফ সেঞ্চুরিও। সর্বোচ্চ ১৩১ রান, আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
শুরুতে যেভাবে খেলছিলেন ডি কক, তাতে মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি নিজের করে নেবেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটার। কিন্তু শেষ তিন ম্যাচে প্রত্যাশিত রান করতে না পারায় সেটি সম্ভব হয়নি। দল সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও শীর্ষ রান সংগ্রাহকের তালিকার তিন নম্বরে আছেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার। নিজের শেষ বিশ্বকাপটিকে বেশ ভালোভাবেই রাঙিয়েছেন তিনি। ১০ ম্যাচে ৪ সেঞ্চুরিতে ডি ককের রান ৫৯৪।
চার নম্বরে আছেন বিশ্বকাপের বিস্ময় বালক রাচিন রবীন্দ্র। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপে ৫৭৮ রান করে কেন উইলিয়ামসনের অভাব ঘুচিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ৩ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন নেদারল্যান্ডসের এই অলরাউন্ডার। ইংলিশদের বিপক্ষে খেলেছেন সর্বোচ্চ ১২৩ রানের ইনিংস। এছাড়া ৫২২ রান করে তারই সতীর্থ ড্যারিল মিচেল আছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তালিকার পাঁচ নম্বরে।
শীর্ষ পাঁচ বোলার
এবারের আসরে সবচেয়ে বড় চমকের নাম শামি। শুরুতে দলে জায়গা পাননি। হার্দিক পান্ডিয়ার ইনজুরির সুযোগ নিয়ে হয়ে ওঠেন দলের মহীরূহ। পরের সাত ম্যাচে ২৪ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার তিনিই। ৭ ম্যাচের মধ্যে তিনটি ম্যাচে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। ফাইনালের আগে কোনও ব্যাটারই তার বিপক্ষে খুব স্বচ্ছন্দ হতে পারেননি।
বোলারদের তালিকার দুই নম্বরে আছেন অস্ট্রেলিয়ার লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। দারুণ বোলিং করে দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন এই স্পিনার। ১১ ম্যাচে ২৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। রবিবার একটি উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার স্পিন কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরনকে ছুঁয়েছেন তিনি। ২০০৭ বিশ্বকাপে ২৩ উইকেট নিয়েছিলেন লঙ্কান লিজেন্ড, যা বিশ্বকাপের এক আসরে এতদিন ছিল কোনও স্পিনারের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। শীর্ষ পাঁচে থাকা বাকি তিন বোলারদের মধ্যে আছেন দিলশান মাদুশাঙ্কা (২১), বুমরা (২০) ও জেরাল্ড কোয়েটজে (২০)।
এক নজরে বিশ্বকাপের সেরা
সর্বোচ্চ রান: বিরাট কোহলি (৭৬৫)
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (২০১*)
সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি: কুইন্টন ডি কক (৪)
সবচেয়ে বেশি ছয়: রোহিত শর্মা (৩১)
সবচেয়ে বেশি উইকেট: মোহাম্মদ শামি (২৪)
সেরা বোলিং ফিগার: মোহাম্মদ শামি (৭/৫৭)
কিপিংয়ে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল: কুইন্টন ডি কক (২০)
আউটফিল্ডে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ: ড্যারিল মিচেল (১১)