সশস্ত্র বাহিনী আজ জাতির আস্থার প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্তমানবতার সেবা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং বিভিন্ন জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সোমবার দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পুনরায় সরকার গঠনের পর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি।’
তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতি যুগোপযোগী করে জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮ প্রণয়ন করেছি। অ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা সিএমএইচগুলোকে অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতার পর একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। সেনাবাহিনীর জন্য তিনি মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মড স্কুল এবং প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং স্কুলসহ আরও অনেক সামরিক প্রতিষ্ঠান ও ইউনিট গঠন করেন। তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভারত ও যুগোশ্লাভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে সে সময়ের অত্যাধুনিক সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান, এয়ার ডিফেন্স রাডার ইত্যাদি বিমানবাহিনীতে যুক্ত করেন। তিনি ১৯৭৪ সালেই একটি প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। দুর্ভাগ্য, জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর বাধাগ্রস্ত হয় দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করি। নতুন প্রজন্মের নিকট মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরি। সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে নানা উদ্যোগ নেই। ১৯৯৮ সালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এবং মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং এবং আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করি। আমরাই সর্বপ্রথম ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ করি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী, সাহসী এবং ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা অর্জন করে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর একটি বিশেষ গৌরবময় দিন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা এ দিনে সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের সূচনা করেন। মুক্তিবাহিনী, বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা ও দেশপ্রেমিক জনতা এই সমন্বিত আক্রমণে একতাবদ্ধ হন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা ও বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতিবছর ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করা হয়।’
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশপ্রেম, পেশাদারত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাবেন এমন আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।’
বাণীতে তিনি সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৩ উপলক্ষে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সব শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
এসময় সশস্ত্র বাহিনী দিবস- ২০২৩ উপলক্ষে নেওয়া সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।