সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ষষ্ঠ দফার অবরোধের প্রথম দিনে রাজধানীর সড়কে কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতো সকাল থেকেই সড়কে গাড়ির চাপ রয়েছে। একইসঙ্গে অবরোধ কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি রাজধানীবাসীর জীবনযাত্রায়। সকালে স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতিও।
বুধবার (২২ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, আজিমপুর, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়। সরেজমিন দেখা যায়, এসব এলাকার সড়কে সকাল থেকেই বাসের সংখ্যা বেশি। অবরোধ কর্মসূচির শুরুর দিকের যান চলাচল কম থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি হলেও এখন তেমনটি নেই। বাস স্টপেজে বেশিক্ষণ দেরি করতে হচ্ছে না যাত্রীদের। আর ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, স্টাফ বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলও চোখে পড়ার মতো। এসব সড়কে গাড়ির উপস্থিতি বেশি হওয়ার কারণে কোনো কোনো জায়গায় দিতে হচ্ছে সিগন্যালও। যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে স্বল্প সময়ের যানজটে।
সড়কে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা জানান, অবরোধের কোনো প্রভাব নেই। স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য দিনের মতো সকাল থেকে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। অফিস ডে হওয়ায় কিছু সময়ের মধ্যেই গাড়ির সংখ্যা আরও বেড়ে যানজট তৈরি হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
আর অবরোধকে ঘিরে কেউ যেন কোনো প্রকার নাশকতামূলক কাজ করতে না পারেন সেদিকে খেয়াল রেখে বরাবরের মতোই সকাল থেকে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সড়কের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে ও গাড়িতে টহল দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাতে দেখা গেছে।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল গনি সাবু বলেন, অবরোধের সমর্থনে এই এলাকায় কোনো ধরনের কার্যক্রম কেউ করেনি। কেউ যদি জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে আসে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করতে আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পেট্রোলিং (টহল) এবং অবস্থান নিয়ে পুরো এলাকায় পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পরিবেশ পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো শঙ্কা নেই।
অন্যদিকে যাত্রীবাহী বাসে আগুন ঠেকাতে সতর্কতা অবলম্বন করছেন বাসের ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও হেলপাররা। ডিএমপির নির্দেশিত সতর্কবার্তা মাথায় রেখেই গাড়ি চালাচ্ছেন তারা। কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে মৌমিতা পরিবহনের চালকের সহকারী জুয়েল রানা বলেন, গাড়ি চালানোর সময় জানালা বন্ধ রেখে সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাচ্ছি। এছাড়াও বাসের পেছনের দিকে লক্ষ্য রাখা, যাত্রীদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা এবং স্টপেজ থেকে বাস ছাড়ার আগে যাত্রীদের ছবি তুলে নিজ দায়িত্বে রাখার বিষয়গুলোও খেয়াল রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে হামলা, হত্যা, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ২৯ অক্টোবর হরতাল এবং ৩১ অক্টোবর, ১ ও ২ নভেম্বর মোট তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের শরিক অন্যান্য দলগুলো। এরপর ৫ ও ৬ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় এবং ৮ ও ৯ নভেম্বর তৃতীয় দফায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা। ১১ ও ১২ নভেম্বর চতুর্থ দফা, ১৫ ও ১৭ নভেম্বর পঞ্চম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষে এবার ৬ষ্ঠ দফার অবরোধ শুরু হলো।