মোকতাদির চৌধুরীর প্রচেষ্টায় বর্জ্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও পাশ্ববর্তী দুটি জেলার জনগণকে বর্জ্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় বেসরকারি খাতে স্থাপিত হচ্ছে ১১ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। বিল্ড ওন অপারেট পদ্ধতিতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করবে বেসরকারি খাতে যৌথভাবে সিদ্দিক ফেব্রিক্স লিমিটেড-ইনটেক এনার্জিস এবং সাউদিয়া জার্মান পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড (এসএফ-এলই-এসজিপিপিএল জেভি)। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ০.১৯১০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১.১০৫ টাকা) হিসেবে ২৫ বছর মেয়াদে উদ্যোক্তা সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ব্যয় হবে চার হাজার ৬৮ কোটি টাকা।

দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্যের দুর্গন্ধ ও স্তুপে অতিষ্ঠ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পৌরসভাসমূহসহ পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব ও হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর পৌরসভার বাসিন্দারা। তাদের এই দুর্ভোগ লাঘবের লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর পরামর্শে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিমিত্তে পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনে এগিয়ে আসে সিদ্দিক ফেব্রিক্স লিমিটেড-ইনটেক এনার্জিস।

universel cardiac hospital

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় বেসরকারি খাতে উদ্যোক্তা সংস্থা কর্তৃক দাখিল করা একটি অযাচিত প্রকল্প প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠায়। স্পন্সর কোম্পানি নিজ অর্থে ও নিজ ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পের প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ট্রান্সমিশন লাইন, সাব-স্টেশন নির্মাাণসহ সম্পূর্ণ ব্যয় নির্বাহ করবে। স্পন্সর কোম্পানি প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পের মেয়াদ ২০ বছর ধরে ট্যারিফ ০.২০ ইউএসডি/কিলোওয়াট ঘণ্টা প্রস্তাব করে। পরবর্তীতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর স্পন্সর কোম্পানি নতুনভাবে ট্যারিফ প্রস্তাব করে। এতে দেখা যায় তারা ১১ মেগাওয়াট ক্যাপাসিটির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০ এবং ২৫ বছর মেয়াদেও প্রস্তাব দেয়। এর মধ্যে ২০ বছর মেয়াদে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টার ট্রারিফ ০.১৯৮০ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১.৮৭৯ টাকা এবং ৫ বছর মেয়াদে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টার দাম ০.১৯৩৮ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১.৪১৫ টাকা প্রস্তাব করে।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১) এর আওতায় প্রস্তাবটি প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই আইনের আওতায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটির বিষয়ে কারিগরি কমিটির মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। কারিগরি কমিটি কর্তৃক প্রস্তাবিত প্রকল্পটিকে যোগ্য হিসেবে বিবেচনার সুপারিশ করে। স্পন্সর নিজ দায়িত্বে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করবে মর্মে উল্লেখ করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা ও পাশ্ববর্তী ৬টি পৌরসভা/ইউনিয়ন থেকে বর্জ্য সংগ্রহ এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত সরবরাহের বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন সংস্থাগুলোর এখতিয়ারভুক্ত। বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনামূল্যে ও কোনো ট্রিপিং ফি ছাড়া বর্জ্য সরবরাহের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, আশুগঞ্জ ইউনিয়ন, সরাইল উপজেলা, ভৈরব, মাদবপুর, আখাউড়া, এবং কসবা পৌরসভা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ এবং পরিবহন বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে নিশ্চয়তা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের বিষয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লি. (পিজিসিবি) ও বাবিউবোর মতামত গ্রহণ করা হয়েছে পিজিসিবি ও ববিউবোর মতামত অনুযায়ী স্পন্সর কোম্পানি কর্তৃক নিজ খরচে প্রকল্প স্থান থেকে দাতিয়ারা ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় ২.৫ কিলোমিটার ৩৩ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন ও দাতিয়ারা ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রে ২টি ৩৩ কেভি বে নির্মাণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় জমি সংগ্রহসহ অবকাঠামো নির্মাণ ও পরবর্তীতে তা সংরক্ষণ ও মেরামত করতে হবে। স্পন্সর কোম্পানি এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিষয়ে বাবিউবোর মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডেও ২০০০ তম সাধারণ বোর্ড সভায় প্রস্তাবিত প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ক্রয়ের সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন,২০১০ (সংশোধিত ২০১১) অনুযায়ী স্পন্সরের সঙ্গে দর কষাকষির মাধ্যমে ট্যারিফ নির্ধারণ করে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী) নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন।

২২ নভেম্বর (বুধবার) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৯টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩টি, বিদ্যুৎ বিভাগের ২টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব ছিল। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়নি কমিটি। অনুমোদিত ৭টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ২৬২ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৬৫০ টাকা।

তিনি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় ১১ মেগাওয়াট ক্ষমতার বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের দরপ্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিল্ড ওন অপারেট পদ্ধতিতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করবে বেসরকারি খাতে যৌথভাবে সিদ্দিক ফেব্রিক্স লিমিটেড-ইনটেক এনার্জিস এবং সাউদিয়া জার্মান পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড (এসএফ-এলই-এসজিপিপিএল জেভি)। প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম ০.১৯১০ মা.ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১.১০৫ টাকা) হিসেবে ২৫ বছর মেয়াদে উদ্যোক্তা সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ব্যয় হবে ৪০৬৮ কোটি টাকা।

জানা গেছে, এর আগে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনের আরো ৩টি প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপেরেশনের ৪২.৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন তাদের প্রতি ইউনিটের ট্যারিফ হচ্ছে ০.২১৭৮ মার্কিন ডলার। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে ইউডি গ্রীন এনার্জি (এনসিসি বাংলাদেশ কো.লি.) তাদের ট্যারিফ প্রতি ইউনিট ০.২০৯১ মার্কিন ডলার। গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪২.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে ক্যাবাস এনভায়রনমেন্ট তাদে ট্রারিফ নির্ধারিত হয়েছে প্রতি ইউনিট ০.২১৫০ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ট্যারিফ কম। এতে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে।

তবে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম উৎপাদনে আসবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রকল্পটি। কমার্শিয়াল অপারেশন ডেট সিওডি অনুযায়ী এটি উৎপাদনে আসবে ২০২৫ সালের জুলাইয়ে। বিশ্ববিখ্যাত সিমেন্স, জার্মানি কোম্পানির কারিগরি সহায়তায় এই প্রকল্পে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হবে সর্বাধুনিক টেকনোলজি, যেটি সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব।

শেয়ার করুন