“মদ হচ্ছে একটা মেডিসিন। এটা মেডিসিন হিসাবে খায়।… আমার ব্যবসা, পবিত্র ব্যবসা। আমি হালাল ব্যবসা করি। মদের ব্যবসার জন্য যদি ১০টা বেত মারে। তাহলে ব্যাংকের ব্যবসার জন্য একশটা বেত মারবে।”—একজন মদের দোকানদারের এমন বক্তব্যের পরও অজানা কারণে তারা চুপ, যারা ২০২১ সালে রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ গোটা দেশটাকেই ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করতে চেয়েছিল! এমনকি তিনি “ইসলাম কী কইছে না কইছে সরকার বুঝবে” বলার পরও তা এখন পর্যন্ত তাদের ‘অনুভূতি’ও স্পর্শ করেনি!
অথচ, ইসলামের মৌলিক পাঁচটি নিষিদ্ধ বস্তুর অন্যতম হলো মদ বা মাদকদ্রব্য। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যে, মদ ও জুয়াকে হারাম হিসেবে অকাট্য ঘোষণা প্রদান করেছে। আল্লাহ তাআলা মদ ও জুয়াকে মানুষের জন্য হারাম করেছেন। শুধু তা-ই নয়, আনাস ইবন মালিক ও আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা বলেন : “আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূল (সা.) মদ সংশ্লিষ্ট দশ শ্রেণির লোককে লানত তথা অভিসম্পাত করেছেন। তারা হলো—মদ প্রস্তুতকারী, বিক্রেতা, পরামর্শদাতা, পানকারী, বহনকারী, যার জন্য বহন করা হয়, পরিবেশনকারী, মূল্যভোগী, ক্রেতা এবং যার জন্য ক্রয় করা হয়।”
আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে আরও বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, “প্রত্যেক নেশাকর বস্তুই মদ বা মদ জাতীয়। আর প্রত্যেক নেশাকর বস্তুই তো হারাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, প্রত্যেক মদ জাতীয় বস্তুই হারাম”।
এ প্রসঙ্গে আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আমার প্রিয় বন্ধু (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ মর্মে অসিয়ত করেন: “(কখনো) তুমি মদ পান করো না। কারণ, তা সকল অকল্যাণ ও অঘটনের চাবিকাঠি”।
একদা বনী ইসরাঈলের জনৈক রাষ্ট্রপতি সে যুগের জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তিকে চারটি কাজের যে কোনো একটি করতে বাধ্য করে। কাজগুলো হলো : মদ্যপান, মানব হত্যা, ব্যভিচার ও শূকরের মাংস খাওয়া। এমনকি তাকে এর কোনো না কোনো একটি করতে অস্বীকার করলে তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিশেষে উক্ত ব্যক্তি বাধ্য হয়ে মদ্য পানকেই সহজ মনে করে তা করতে রাজি হলো। যখন সে মদ্য পান করে সম্পূর্ণ মাতাল হয়ে গেলো তখন উক্ত সকল কাজ করাই তার জন্য সহজ হয়ে গেলো।
মাদক, জুয়া ও ব্যভিচার সর্বধর্মেই নিষিদ্ধ, সব আইনেই গর্হিত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুদ্ধ-সিদ্ধ ও পূত-পবিত্র, সফল ও সার্থক জীবনের জন্য মাদক-জুয়ার কবল ও ছোবল থেকে নিজেদের ও পরিবারকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। দেশের উন্নয়নে ও জাতির সুরক্ষার জন্য এসব অসামাজিক পাপাচার, অপরাধ ও অপকর্মের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে প্রশাসনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: কবি ও সংস্কৃতি কর্মী