বাংলাদেশের পাঁচ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার (প্রায় ১২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা) সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ফলে প্রাথমিক শৈশব বিকাশ, মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন, নদী তীর সুরক্ষা ও নাব্য; শহুরে প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও গ্যাস বিতরণ দক্ষতার উন্নতির মাধ্যমে স্থিতিস্থাপক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব শরিফা খান এবং বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৈলায়ে সেক। ইআরডি ও বিশ্বব্যাংক থেকে পাঠানো পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
ইআরডির সিনিয়র সচিব শরিফা খান বলেন, লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন অপারেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে ৯ লাখ গ্রামীণ যুবক কর্মসংস্থান উপযোগী হিসেবে গড়ে উঠবে। অন্যান্য প্রকল্পগুলোরও সুফল পাবে এ দেশের মানুষ।
চুক্তি অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২১ কোটি ডলারের ‘বাংলাদেশ এনহ্যান্সিং ইনভেস্টমেন্টস অ্যান্ড বেনিফিটস ফর আর্লি ইয়ারস’ প্রজেক্ট। এর আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের প্রায় ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন গর্ভবতী মহিলা এবং ৪ বছরের কম বয়সি শিশুদের মায়েদের নগদ অর্থ স্থানান্তর করা হবে। পাশাপাশি কাউন্সেলিং পরিষেবা দেওয়ার মাধ্যমে প্রাথমিক শৈশব বিকাশের উন্নতিতে সহায়তা করবে।
এছাড়া ৩০ কোটি ডলারের ‘লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন অপারেশন’ প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর আওতায় শেখার ফলাফল এবং শিক্ষার মান উন্নত করে মাধ্যমিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।
কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন শেখার ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে এবং ভবিষ্যতের ধাক্কাগুলোর জন্য প্রস্তুতির উন্নতি করতে, প্রকল্পটি ক্লাসের শিক্ষার সঙ্গে মিশ্রিত পরিপূরক অনলাইন শিক্ষার পরিবর্তন করবে। ঝরে পড়ার হার কমাতে কর্মসূচিটি কাজ করবে। ফলে ৮০ লাখ ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হবে এবং ৫ হাজার স্কুলে সক্রিয় যৌন হয়রানি ও প্রতিরোধ কমিটি রয়েছে তা নিশ্চিত করবে।
চুক্তি হওয়া ১০ কোটি ২০ লাখ ডলারে ‘যমুনা নদী টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্প ১’ বাস্তবায়ন করা হবে। এর আওতায় যমুনা নদীতে তীর সুরক্ষা এবং নাব্যতা উন্নত করতে সাহায্য করবে।
এছাড়া নদীতীর ক্ষয় এবং বন্যা থেকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি রক্ষা করবে। হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুতি থেকে বাঁচাবে এবং তাদের জীবিকা ও সম্পদ রক্ষা করবে। এটি পর্যাপ্ত গভীরতার সঙ্গে নেভিগশন চ্যানেলগুলোকে উন্নত করবে, যা সারা বছর বড় কার্গো জাহাজগুলোকে চলাচল করতে সহায্য করবে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ ও বাণিজ্যকে পুনরুজ্জীবিত করবে।
২০ কোটি ডলারের নগর স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা প্রকল্পটি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার ও তারাবো পৌরসভায় বাস্তবায়ন হবে। এর আওতায় ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগসহ সাধারণ অসুস্থতার চিকিৎসা, প্রতিরোধ এবং রেফারেলের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা উন্নত করবে।
৩০ কোটি ডলারের গ্যাস সেক্টর ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট এবং কার্বন অ্যাবেটমেন্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নে ব্যয় হবে। এর আওতায় প্রি-পেইড মিটারিং সিস্টেমের মাধ্যমে গ্যাস বিতরণ এবং শেষ-ব্যবহারের দক্ষতা উন্নত করতে এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মান শৃঙ্খলে মিথেন নির্গমন কমাতে সাহায্য করবে। এটি ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে ১ দশমিক ২ মিলিয়নেরও বেশি প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করবে।
চুক্তি অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৈলায়ে সেক বলেছেন, বাসযোগ্য গ্রহে দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ার জন্য বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। দেশটির সঙ্গে স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রভাবশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে; যা লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছে। এ প্রকল্পগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করার সঙ্গে শিশুদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে।