রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় পেলো ভারত

বিশ্বকাপের রেশ পুরোপুরি না কাটতেই ফের শুরু টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সেই সিরিজের ভারত দল সাজিয়েছে দ্বিতীয় সারির খেলোয়াড়দের নিয়েই। অবশ্য অস্ট্রেলিয়া দলেও নেই বিশ্বজয়ীদের অনেকে। যারা ছিলেন তাঁদের মধ্যে ট্রাভিস হেড, অ্যাডাম জাম্পা, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরাও আজ থাকলেন মাঠের বাইরে। তবু বিশাখাপট্টনম শেষ বলে গড়ানো রোমাঞ্চকর ম্যাচই উপহার পেল। যে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ২০৮ রান টপকে ২ উইকেটে জিতেছে ভারত। টি-টোয়েন্টিতে ভারতের এটাই সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়। এর আগে ২০১৯ সালে হায়দরাবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২০৭ রান টপকে জিতেছিল ভারতীয়রা।

নাটক যা হওয়ার তা অবশ্য শেষ ওভারেই হয়েছে। শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৭ রান, হাতে ছিল ৫ উইকেট। শন অ্যাবটের করা প্রথম বলটায় চার মেরে কাজটা আরও সহজ করে দেন রিংকু সিং। পরের বলে ১টি বাই রান আসার পর ভারতের দরকার শেষ ৪ বলে ২ রান। এরপর টানা তিন বল উইকেট হারায় ভারত।

ওভারের তৃতীয় বলে অক্ষর প্যাটেল বলটাকে আকাশে তুলে বোলার অ্যাবটের ফিরত ক্যাচের শিকার। পরের বলে রানআউট রবি বিষ্ণয়। সমীকরণ যখন ২ বলে ২ রানের তখন রানআউট অর্শদীপ সিংও। তবে আউটের আগে ১টি রান তুলে ফেলেন ভারতীয় পেসার। তাতে স্ট্রাইক ফেরত পেয়ে যান রিংকু। আইপিএল মাতানো ব্যাটসম্যান শেষ বলে ছক্কাই মেরে দিলেন। তবে ওই ছক্কাটা যোগ হয়নি রিংকুর হিসাবে। হবেই বা কীভাবে, বলটা যে নো বল ছিল। রিংকু ছক্কার মারার আগেই যে ম্যাচ শেষ!

ছক্কাটা হিসাবে না আসায় ১৪ বলে অপরাজিত ২২ রান নিয়েই ফিরতে হয়েছে রিংকুকে। ভারতের জয়ের নায়ক অবশ্য সূর্যকুমার। নিজের প্রিয় সংস্করণে ফিরেই ৪২ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেলেছেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। ৯টি চার ও ৪টি ছক্কা মেরে সূর্য যখন ফিরলেন ভারতের স্কোর ১৭.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৪। সেখান থেকেই ১৪ বলে ১৫ রানের সমীকরণ মেলাতে শেষ বল পর্যন্ত খেলতে হয়েছে ভারতকে।

রান তাড়ায় ভারত প্রথম উইকেট হারায় পঞ্চম বলে। কোনো বল খেলার আগেই রানআউট রুতুরাজ গায়কোয়াড়। আরেক ওপেনার যশস্বী জয়সোয়াল যখন ৮ বলে ২১ রান করে ফিরলেন ভারতের রান ২.৩ ওভারে ২২ রান। সেখান থেকেই ঈশান কিষানকে নিয়ে ১১২ রানের জুটি সূর্যের। বিশ্বকাপ খেলা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান কিষান ৩৯ বলে ৫ ছক্কায় করেন ৫৮ রান। ১৩৪ রানে কিষান ও ১৫৪ রানে তিলক বর্মার বিদায়ের পর রিংকুর সঙ্গে ৪০ রানের জুটি গড়েন সূর্য। অধিনায়কের অসমাপ্ত কাজটা পরে সম্পন্ন করে রিংকু।

এর আগে জশ ইংলিসের ৫০ বলে ১১০ রানের ঝোড়ো ইনিংস ইনিংসে ২০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৩ উইকেটে ২০৮ রান। টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠান সূর্যকুমার। ম্যাথু শর্টের সঙ্গে স্মিথের উদ্বোধনী জুটি টেকে ৪.৪ ওভার। রবি বিষ্ণয়ের গুগলি পড়তে না পেরে বোল্ড হন শর্ট। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় উইকেট জুটি অবশ্য স্থায়ী হয়েছে ১১ ওভার, ওই সময় উঠেছে ১৩০ রান। ইংলিস শুরুটা করেন ধীরে, প্রথম ১০ বলে করেন মাত্র ৯ রান। অষ্টম ওভারে প্রসিধ কৃষ্ণার ওপর চড়াও হলে সে ওভারেই আসে ১৯। ১৮তম ওভারে আউট হওয়ার আগপর্যন্ত তাঁর ঝড়ই চলেছে।

২৯ বলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম অর্ধশতক পান ইংলিস। ইনিংসের পরের অংশে ব্যাটিং করেন আরও ঝোড়ো, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম শতক পূর্ণ করে ফেলেন ৪৭ বলেই। ভারতের মাটিতে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের পর দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে তিন অঙ্কের ইনিংস দেখলেন তিনি, যাতে ১১টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৮টি ছক্কাও। অন্য প্রান্তে স্মিথ ঠিক ইংলিসের সঙ্গে ছন্দ মেলাতে পারছিলেন না, পরের দিকে সেটি পুষিয়ে দিয়ে ৪০ বলে করেন অর্ধশতক। তবে রানআউট হয়ে দ্রুতই ফিরতে হয় তাঁকে। ইংলিস আউট হয়ে যাওয়ার পর শেষ ৩ ওভারে ২৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ১৩ বলে ১৯ রান করেন টিম ডেভিড।

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ আগামী রোববার তিরুবনন্তপুরমে।

শেয়ার করুন