বাংলাদেশে ভোট দেখতে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ পররাষ্ট্রসচিবের

মত ও পথ ডেস্ক

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ফাইল ছবি

কোন পরিস্থিতিতে ও কী ধরনের পটভূমিতে জাতীয় সংসদের নির্বাচন হতে চলেছে, বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের কাছে তা ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন তাদের ‘গণতন্ত্রের উৎসব’ দেখতে বাংলাদেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আজ শনিবার দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে মোমেন বলেন, রাষ্ট্রদূতদের বলেছি, আপনারা আসুন। দেখুন। পর্যবেক্ষণ করুন বাংলাদেশের ভোট কতটা সুষ্ঠু ও অবাধ হয়। কীভাবে মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেন।

তিন দিনের দিল্লি সফরে গিয়ে পররাষ্ট্রসচিব মোমেন ও প্রতিনিধিরা গত শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ আলোচনায় অংশ নেন। ওই দিন রাতে হাইকমিশনে ৫০ জনের বেশি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে মিলিত হন তিনি। এই রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় তিনি ভোট আবহে বাংলাদেশের পরিস্থিত ব্যাখ্যা করেন। মোমেন বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত ইতিমধ্যে তার মনোভাব স্পষ্ট করেছে। টু প্লাস টু আলোচনায়ও সেটা উঠেছিল। ভারত জানিয়েছে, তারা সংবিধান ও মানুষের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেবে।

universel cardiac hospital

সাংবাদিকদের মোমেন বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বলেছি, আপনারাও পর্যবেক্ষক পাঠান। আমরা সব রকমের সহযোগিতা করব। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে মোমেন বলেন, বাংলাদেশে ভোট ও সেটাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতা কেন, তা রাষ্ট্রদূতদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি। গত ২৮ অক্টোবর থেকে পরিস্থিতি কীভাবে জটিল হয়ে পড়ে, কীভাবে সহিংসতা মাথাচাড়া দেয়, সরকারবিরোধিতার নামে কীভাবে পুলিশ হত্যা করা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করা হয়েছে—তা জানিয়ে তাদের ভ্রান্তি দূর করতে চেয়েছি। তাদের বলেছি, বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে।

বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকবে। প্রায় ৯০টি দেশের রাষ্ট্রদূতেরা ভারত থেকে বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মধ্যে ৫০ জনের বেশি রাষ্ট্রদূত মোমেনের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে নৈশভোজে অংশ নেন। এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, কোনো দেশই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না। বাংলাদেশও চায় না, কেউ অযথা অনধিকার চর্চা করুক। বাংলাদেশ সরকার দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সংবিধান রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ভোট প্রসঙ্গ বিশেষ প্রাধান্য পায়। কারা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে জানতে চাওয়া হলে মোমেন বলেন, একেক দলের একেক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তবে আপাতত চলছে মনোনয়নপত্র পেশ ও বাছাইপ্রক্রিয়া। জাতীয় পার্টি রয়েছে। নতুন কিছু দলও নির্বাচনে উৎসাহী। মোমেন বলেন, তবে নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, বিএনপি রাজি হলে তফসিল নতুনভাবে ঘোষণা করা যাবে। কমিশনের মতে, ভোটে জনগণের অংশগ্রহণই বড় কথা। জনগণ উৎসাহী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কি না, সেটাই সার্থকতার পরিচয়।

কোনো কোনো দেশ সংলাপের জন্য সচেষ্ট, সে কথা মেনে নিয়েও এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, আমি রাজনীতিক নই। আমার উত্তর আপনাদের সন্তুষ্ট না–ও করতে পারে। তবে মনে হয়, সংলাপের সময় পেরিয়ে গেছে। এখন আর সংলাপের কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। মানবাধিকার আন্দোলনকর্মীসহ অনেককে দেদার গ্রেপ্তার করা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মোমেন দেশের রাজনৈতিক পটভূমি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের আগের দিন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ছিল। কিন্তু ওই দিন সব অন্য রকম হয়ে যায়। বিরোধীদের ডাকা আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। সেই থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলেছে। দুষ্কৃতকারীদের ধরা হচ্ছে।

শেয়ার করুন