পাঁচ উন্নয়ন প্রকল্পে বিলিয়ন ডলার দিচ্ছে এডিবি

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করেছে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে ১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১০২ কোটি ৬৪ লাখ ডলার) ঋণ দেবে এডিবি।

২৮ নভেম্বর (মঙ্গলবার) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এডিবির এ ঋণ চুক্তি সই হয়।

universel cardiac hospital

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং এডিবির পক্ষে কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং চুক্তিতে সই করেন।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, মোট ঋণের মধ্যে এডিবি ৭২ কোটি ৬৪ লাখ ডলার দেবে মার্কিন ডলারে। বাকি ৩০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ২৭ কোটি ৭৮ লাখ ইউরোতে পাবে বাংলাদেশ।

যে পাঁচ প্রকল্পে বিলিয়ন ডলারের এই ঋণ দেওয়া হবে সেগুলো হলো- ‘স্মার্ট মিটারিং এনার্জি এফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্প; ‘ভ্যাকসিন, থেরাপেটিকস অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড রেগুলেটরি স্ট্রেন্থেনিং’ প্রকল্প; ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শহুরে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন’ প্রকল্প; ‘দ্বিতীয় দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ঢাকা-উত্তর-পশ্চিম করিডোর সড়ক’ প্রকল্প এবং ‘ইম্প্রুভিং কম্পিউটার অ্যান্ড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টারশিয়ারি এডুকেশন’ প্রকল্প।

এরমধ্যে ‘স্মার্ট মিটারিং এনার্জি এফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি। সংস্থাটির এই ঋণে বাংলাদেশকে স্মার্ট মিটারিংয়ের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি ক্লিন এনার্জি সলিউশনে রূপান্তরিত করতে সহায়তা করবে।

এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি এবং নারায়ণগঞ্জে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ৬ লাখ ৫০ হাজার স্মার্ট প্রিপেইড গ্যাস মিটারের সংযোগ দেওয়া হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করবে।

‘ভ্যাকসিন, থেরাপেটিকস অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড রেগুলেটরি স্ট্রেন্থেনিং’ প্রকল্পে ৩৩ দশমিক ৬৫ কোটি ডলার দেবে এডিবি।

এই ঋণে সরকার দেশীয় ভ্যাকসিন, থেরাপিউটিকস এবং ডায়াগনস্টিকস উৎপাদন ক্ষমতা স্থাপন করবে। এছাড়া ভ্যাকসিন সরবরাহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় নিয়ন্ত্রককে শক্তিশালী করা হবে। গোপালগঞ্জে এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) বিদ্যমান অবস্থানে একটি ভ্যাকসিন, থেরাপিউটিক এবং ডায়াগনস্টিকস ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাসিলিটি ও গুদামজাতকরণ ইউনিট স্থাপন করা হবে। যেখান থেকে বছরে ৫৮ মিলিয়ন ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা সৃষ্টি হবে।

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শহুরে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন’ প্রকল্পের আওতায় বান্দরবান, লামা এবং রাঙ্গামাটি শহরে বিশুদ্ধ পানি এবং স্যানিটেশন পরিষেবা নিশ্চিতে ৯ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি।

এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং প্রকল্পটিতে অর্থায়নের বিষয়ে বলেছেন, আমরা বিশুদ্ধ পানি এবং স্যানিটেশন পরিষেবা প্রদান এবং পিছিয়ে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জলবায়ু-সহনশীল উন্নয়ন অনুসরণে সরকারকে সমর্থন করতে পেরে আনন্দিত। এডিবির এই অর্থে উন্নত পরিষেবাগুলো পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি কমাবে এবং স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সুযোগ বাড়বে।

‘ইম্প্রুভিং কম্পিউটার অ্যান্ড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টারশিয়ারি এডুকেশন’ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল কর্মসূচি শক্তিশালী করতে ১০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি।

এই ঋণে বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) প্রোগ্রামের উন্নতি হবে বলে জানানো হয়।

প্রকল্পটির অর্থায়নের বিষয়ে এডিমন গিনটিং বলেছেন, এই প্রকল্পটি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব প্রযুক্তি গ্রহণকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়ন এবং দেশকে ডিজিটাল যোগ্য তরুণ মানবসম্পদ ও উদ্যোক্তা তৈরি করবে।

উৎপাদন খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা ও কর্মসংস্থান তৈরির জন্য প্রকল্পটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন করবে।

‘দ্বিতীয় দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ঢাকা-উত্তর-পশ্চিম করিডোর সড়ক’ প্রকল্পে ৩০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি।

এই ঋণ বাংলাদেশে ঢাকা-উত্তর-পশ্চিম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করিডোরকে আপগ্রেড করতে সহায়তা করা হবে। প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং উপ-আঞ্চলিক সংযোগ ও বাণিজ্যের উন্নতির জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করে।

এছাড়া এটি ঢাকা-উত্তর-পশ্চিম সড়ক করিডোরে যানবাহন পরিচালনার খরচ, ভ্রমণের সময়, যানবাহনের নির্গমন, দুর্ঘটনা এবং যানজট কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর গিনটিং।

শেয়ার করুন