সাত দিনের যুদ্ধবিরতি শেষে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আবারও বিমান হামলা শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সকালে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ পার হলে ইসরায়েলি বোমারু বিমানগুলো অবরুদ্ধ গাজার উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালাতে শুরু করে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গাজার বিভিন্ন এলাকায় বোমা হামলার বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। উত্তর-পশ্চিম গাজায় ব্যাপক গোলাগুলিরও খবর মিলছে বিভিন্ন সূত্রে। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে চাইছে হামাস।
আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজার শেখ রেদওয়ান এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে। সেখানকার মধ্যাঞ্চলে আর্টিলারির গোলাও ছোড়া হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনী স্থল অভিযান আরও জোরদার করতে চাইছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অভিযোগ, যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে অবৈধ ইহুদী বসতি লক্ষ্য করে হামাসের যোদ্ধারা রকেট হামলা চালালে ইসরায়েল আগ্রাসন শুরু করে।
সামনের কয়েক ঘণ্টায় ব্যাপক হামলা-পাল্টা হামলার আশঙ্কা করছেন গাজাবাসী। তারা বলছেন, এমন নারকীয় পরিস্থিতির মধ্যেই তাদের গাজায় থাকতে হচ্ছে, যেখানে জীবন যাপনের সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে দখলদার বাহিনী।
বছরের পর বছর ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে অবৈধভাবে হুইদী বসতি গড়ে তোলা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস বহুদিন ধরে ক্ষুব্ধ ছিল। এর মধ্যে আল আকসা মসজিদসহ বিভিন্ন এলাকায় ফিলিস্তিনিদের হত্যা, চরম নির্যাতন ও দমন-পীড়নের জবাব দিতে ৭ অক্টোবর আকস্মিক ইসরায়েলে হামলা করে বসে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এতে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২০০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এছাড়া ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গেছেন হামাস যোদ্ধারা।
ওই আক্রমণের জবাব দিতে গাজায় নির্বিচারে বিমান হামলা চালাতে থাকে ইসরায়েলি বাহিনী। বেসামরিক স্থাপনা, এমনকি হাসপাতাল ও আশ্রয় কেন্দ্রেও চলতে থাকে তাদের বোমা হামলা। এতে এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৬ হাজারই শিশু।
এই পরিস্থিতিতে গাজাকে ‘শিশুদের কবরস্থান’ বলে বর্ণনা করে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কাতারের মধ্যস্থতায় মিসর, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের সহায়তায় হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। সেখানে জিম্মি ও বন্দী মুক্তির শর্তও ছিল।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ২৪ নভেম্বর দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১১০ জিম্মিকে ছেড়ে দিয়েছে হামাস। বিনিময়ে দখলদার ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ২৪০ ফিলিস্তিনি।
প্রথমে চার দিনের যুদ্ধবিরতি হলেও পরে তা বাড়ানো হয়। বর্ধিত যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শুক্রবার ভোরে শেষ হয়। দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সত্ত্বেও ইসরায়েল হুমকি দিয়ে আসছিল, যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়া মাত্রই তারা আবারও গাজায় হামলা চালাবে। শেষ পর্যন্ত, ওই পথেই হাঁটল দখলদার দেশটি।