জাতীয় নির্বাচন ঘিরে হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে অসহিষ্ণু ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের রুটি-রুজির ওপর আঘাত কোনোভাবেই অধিকার আদায়ের সংগ্রাম হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারী সারাদেশে অসহিষ্ণু ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে সংস্থাটি নির্বাচনকালীন সব রাজনৈতিক দলকে ধৈর্য, সংযম ও সহনশীলতা প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।
এতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কমিশন প্রত্যক্ষ করেছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারী দেশব্যাপী অসহিষ্ণু ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের নামে দৈনন্দিন জীবনে ক্ষতিকর পদক্ষেপসমূহ যেমন- অবরোধ ও হুমকি ইত্যাদির মাধ্যমে জনসাধারণের মনে ভীতি সঞ্চারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এতে জনজীবনের স্বাভাবিক গতিতে ছন্দপতন ঘটেছে। খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের দৈনিক আয়েও প্রভাব পড়েছে। বিপর্যস্ত হচ্ছে সামগ্রিক জীবন, জীবিকা ও অর্থনীতির চলমান আবর্ত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ জাতীয় অবস্থার সৃষ্টি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন; বেঁচে থাকার উপকরণ রুটি-রুজির ওপর আঘাত কোনোভাবেই অধিকার আদায়ের সংগ্রাম হতে পারে না। জনসমাগমের স্থানে অগ্নিসংযোগ, গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ, শিক্ষায়তনের ফটকে তালাবদ্ধ করা এবং বিদ্যালয়ে আগুন দেওয়ার মাধ্যমে ভয়-ভীতি ও সহিংসতা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যা সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক জীবনযাপনের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে।
হরতাল, অবরোধ ও সহিংসতার মতো রাজনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সারাদেশে নাশকতা, বিশৃঙ্খলতা ছড়ানোর কারণে জনজীবন দুর্বিষহ হওয়ার সম্মুখীন হচ্ছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
সেখানে বলা হয়, বছরের শেষ অংশে সারাদেশের শিক্ষায়তনগুলোতে মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন উভয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলমান হরতাল-অবরোধের কারণে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা গ্রহণে বিঘ্ন ঘটছে। এতে মানসিকভাবে শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
‘বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে গুপ্ত হামলা, অগ্নিসংযোগ ও পিকেটিংয়ের মত ঘটনাও প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হুমকি দেওয়া, হরতাল-অবরোধ প্রভৃতির কারণে জনমনে আতঙ্ক ও ভয়ের পরিস্থিতির সৃষ্টি দেশের জন্য কখনোই কল্যাণকর হতে পারে না’- মনে করে কমিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এরই মধ্যে সারাদেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সংবিধানসম্মত উপায়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণ নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে স্ব-স্ব নির্বাচনী এলাকার জনপ্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে, এটি প্রত্যাশিত। এ অবস্থায় সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টায় সব রাজনৈতিক দলকে ধৈর্য, সংযম ও সহনশীলতা ধারণ করতে আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার কমিশন।
একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পেশাদারত্ব বজায় রেখে জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা রক্ষার আহ্বানও জানিয়েছে কমিশন।