ঢাকা টেস্টে শুরুর দিন থেকেই ছিল স্পিনারদের দাপট। চতুর্থ দিনে এসে সেটা আরও বেশি স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাটারদের উপর রীতিমত ছড়ি ঘুরিয়েছেন দুই কিউই স্পিনার এজাজ প্যাটেল এবং মিচেল স্যান্টনার। মিরপুরের পিচ, দুই কিউই পেসারের দক্ষতা আর সেইসঙ্গে বাংলাদেশি ব্যাটারদের ক্রমাগত ভুল, তিনে মিলে ২য় ইনিংসে বলতে গেলে ভরাডুবিই হয়েছে বাংলাদেশের।
৪র্থ দিনে বাংলাদেশ নিজেদের প্রত্যাশিত রানটা পেয়ে গিয়েছে এমন বলা চলে না। সবকটি উইকেট হারিয়ে করেছে ১৪৪ রান। ঢাকা টেস্ট জিততে কিউইদের লক্ষ্য ১৩৭। পিচের অবস্থা আর টাইগার স্পিনারদের সুবাদে এতে খানিক আশা নিশ্চিতভাবেই দেখতে চাইবেন টাইগার ভক্তরা। অবশ্য এরপরেও কিছুটা আক্ষেপ থাকা মোটেই অস্বাভাবিক না।
৪র্থ দিনের শুরু থেকেই আসা-যাওয়ার মিছিলে নাম লিখিয়েছেন টাইগার ব্যাটাররা। বাজে শট সিলেকশন, অহেতুক আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করে দলের বিপদটাই বাড়িয়েছেন তারা। অথচ ধীরগতির শুরুতে আশার আলোটা উজ্জ্বল করেছিলে মুমিনুল হক আর জাকির হাসান। দুজন মিলে যোগ করেছেন ৩৩ রান। সেটাই বাংলাদেশকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেয় সকালে।
দিনের প্রথম আঘাত এজাজ প্যাটেলের। তার বলেই লেগ বিফোর হয়ে মুমিনুল আউট হয়েছেন ১০ রান করে। এজাজের বলে পুল করতে চেয়েছিলেন কিনা নিশ্চিত ছিলেন না মুমিনুল নিজেও। ভাল একটা পার্টনারশিপ মুমিনুল বিসর্জন দিয়েছেন লেগবিফোর হয়ে। ৭১ রানে বাংলাদেশ হারায় তৃতীয় উইকেট।
মুশফিকুর রহিম আউট হয়েছেন স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন কিনা নিজেই হয়ত সন্দিহান। স্যান্টনারের ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা বুঝে ওঠা হয়নি তার। বলের বাড়তি বাউন্সটা বুঝতে তালগোল পাকিয়েছেন। ছাড়বেন কি খেলবেন বুঝতেই সময় পার করেছেন। স্লিপে ক্যাচ নিতে সমস্যাই হয়নি ড্যারিল মিচেলের।
অভিজ্ঞরা যখন ভুল করেছেন, তখন নবীন শাহাদাত দিপুকে ক্ষমা হয়ত করাই যায়। লাইন বুঝতে ভুল করেছেন কিছুটা। ব্যাটে বলে হয়নি তার। লেগবিফোরে কাঁটা পড়েছেন এই ব্যাটার। স্কোরবোর্ডে ৮৮ রানে ৫ উইকেট।
মেহেদি হাসান মিরাজ কেন চাপের সময়ে অমন শট খেলতে চেয়েছেন, সেটাও প্রশ্ন করা যেতেই পারে। টপ এজড হয়ে মিচেল স্যান্টনারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। অথচ, দলের এমন বিপর্যয়ে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিল, আরও খানিকটা বড় ইনিংস। তবে, মিরাজ ব্যর্থ হয়েছেন, দলেরও বিপদ বাড়িয়েছেন।
নুরুল হাসান সোহান খেলতে চেয়েছেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে। ফ্রন্টফুট অনেকটা সামনে নিয়ে পেছনে খেলার ভাবনা ছিল তার। পুরো প্ল্যানটাই ছিল অহেতুক। আর ফলাফলও দিয়েছেন হাতেনাতে। ৩ বল খেলে ডাক মেরে ফিরেছেন ক্রিজে।
আর আসা-যাওয়ার এই পুরো মিছিল অপরপাশ থেকে ধৈর্য্য নিয়ে দেখেছেন ওপেনার জাকির হাসান। এমন সময়েও মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন অনেকটা সময়। করেছেন ফিফটিও। এরপরেই বড় শট খেলতে চেয়েছেন। তবে সেটা খুব বেশি কাজে দেয়নি। ৮৬ বলে ৫৯ রান করে শেষ হয় তার কার্যকরী ইনিংসটি।
মাঝে ১৯ বলে ৯ রান করা নাইম বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে লিড ১০০ পার করতে। আর তাইজুল-শরীফুলরা সেটাকে টেনে নিয়েছেন ১৩৬ পর্যন্ত। দলীয় ১৪৪ রানে শরীফুল আউট হলে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোরার ৫৯ করা জাকির। আর কিউইদের মধ্যে বল হাতে এজাজ প্যাটেল একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট। ৩ উইকেট গিয়েছে স্যান্টনারের ভাগ্যে। আর একটি উইকেট পেয়েছেন টিম সাউদি।