একেকজনের সম্পদ বেড়েছে ২০০–৩০০ গুণ, কী করে সম্ভব: সুলতানা কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল
মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। ফাইল ছবি

দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রীর করা এক মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের নিজেদের সম্পদ কতখানি বেড়েছে আর কোন মানবাধিকারকর্মীর সম্পদ কতখানি বেড়েছে, সেই চ্যালেঞ্জ এখান থেকে করতে চাই।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ‘আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন’ শিরোনামে সম্মেলনটির আয়োজন করে কাপেং ফাউন্ডেশন। এ সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সুলতানা কামাল মানবাধিকার পরিস্থিতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমি দখল, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকারের কথা বলতে বললে এখন বিব্রত হই। পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা নিজেদের মানবাধিকারের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড় করিয়েছেন। সভ্য, গণতান্ত্রিক দেশে, মানবাধিকারবোধসম্পন্ন সমাজে মানবাধিকারকর্মীদের আতঙ্কে থাকার কথা নয়; আতঙ্কে থাকার কথা লুটেরাদের। যখন পত্রিকা পড়তে থাকি, আমি ভাবতে থাকি, আমি কি একটা বাস্তব জগতে বাস করছি! এটাও সম্ভব! একেকজন মানুষের সম্পদ ২০০ গুণ, ৩০০ গুণ, ৪০০ গুণ বেড়েছে। ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় দিবস পালন করব। স্বাধীনতা আমাদের গৌরব, অহংকার। আমাদের এই অহংকারের অবস্থা!

৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, মানবাধিকার একটি ‘ব্যবসায়’ পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গ টেনে সুলতানা কামাল বলেন, তথ্যমন্ত্রী অত্যন্ত স্পর্ধার সঙ্গে বলেছেন, মানবাধিকার এখন ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত বড় স্পর্ধা কে দিয়েছে তাঁকে এ ধরনের উক্তি করার! তাঁদের নিজেদের সম্পদ কতখানি বেড়েছে আর কোন মানবাধিকারকর্মীর সম্পদ কতখানি বেড়েছে, সেই চ্যালেঞ্জ এখান থেকে করতে চাই। তারা মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করতে পারেন না। মানবাধিকারকর্মীদের সুরক্ষা দিতে পারেন না। সে ব্যর্থতা ঢাকতে আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলেন, আমাদের হুমকিতে রাখতে চান।

সুলতানা কামাল আরও বলেন, তারা বলতে পারে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। মুক্তিযুদ্ধের যেসব অঙ্গীকার ছিল, সেগুলো একটি একটি করে পালন করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির প্রমাণ দিক তারা। মুখে বলবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, কিন্তু কোনো চেতনাধারা বজায় রাখবে না, সেটা তো সহ্য করব না। দেশটা তো ইজারা দিয়ে দিইনি। মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। বিশেষ গোষ্ঠীর যুদ্ধ ছিল না। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নেতা ছিলেন, কোনো প্রশ্ন সেখানে তোলার নেই।

সুলতানা কামাল বলেন, এই দেশের মানুষের দায়িত্ব আছে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করার। সরকার ‘আদিবাসী’ পরিচয়কে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। অধিকার রক্ষায় তিনি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জনগণকে ধৈর্য ধরে ঐক্যবদ্ধ থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে অভিযোগ করা হয়, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জমি বেদখল হওয়া, নারী নির্যাতন, মিথ্যা মামলার ঘটনা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। উন্নয়নের নামে জমি দখল করা হচ্ছে। ২০২২ সালে পার্বত্য চট্টগামে ৩৭টি, সমতল অঞ্চলে ৪টি পরিবার ভূমি হারিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৪২১ একর ও সমতলে ১৫ একরের মতো জমি জবরদখলের চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০টি পাহাড়ি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবার ও ৫টি সমতলের পরিবারের শস্যখেত ও বাগান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গ্রেপ্তার, আটক, শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে ২৭৬টি। যৌন হয়রানি, ধর্ষণচেষ্টা, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে ২১টি।

শেয়ার করুন