বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে মদ, জুয়া, হাউজিং এগুলো নিষিদ্ধ ছিল। আর স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে এগুলো চালু করেছিল। জিয়াউর রহমান, এরশাদকে কী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বলবেন? না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হলাম আমরা যারা জুয়া খেলি না, আমরা যারা মদ বিক্রিও করিনা, খাইও না। আমি কাউকে নিয়ে এভাবে কথা বলতে চাই না; কিন্তু আমি শুনলাম, কোনো কোনো লোক, যারা মদের ব্যাপারি, যারা জুয়াড় আসর বসায়, যারা সংস্কৃতির রাজধানীতে বিভিন্ন ধরনের অপসংস্কৃতি নিয়ে আসতে চায়, তারা যখন নিজদেরকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বলে বঙ্গবন্ধুকে কলুষিত করতে চায় তখন একটু বলতে হয়, এজন্যই বললাম।
১৯ নভেম্বর (মঙ্গলবার) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপির সমর্থনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও পৌর আওয়ামী যুবলীগের নির্বাচনী কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, যারা মদের ব্যাপারী, জুয়া খেলার আসর বসায় তারা কখনোই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হতে পারে না। অপসংস্কৃতিকে ধারণ করে টাকা রোজগার করে আপনি কখনোই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হতে পারেন না। যারা এসব কর্মকাণ্ড করেও নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে দাবি করেন, আমি অনুরোধ করবো দয়া করে আপনারা নিজেদের নামের পূর্বে এই পরিচয়টি লিখবেন না। আর যদি এসব করতে থাকেন তাহলে যুবলীগের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, কেউ যদি রাজনীতি করতে চায় কিংবা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়, তাতে কোনো অসুবিধা নাই। আপনারা শতভাগ রাজনীতি করতে পারেন, কিন্তু মেহেরবানি করে যে বঙ্গবন্ধু মদ-জুয়াকে বন্ধ করে গিয়েছেন, সেই মদ জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে দয়া করে নিজেকে উপস্থাপন করবেন না।
মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, আমাদের পরবর্তী যে জেনারেশন, যে জেনারেশনট আমাদের হাত ধরে গড়ে উঠবে; সেই জেনারেশনটাকে আমরা ধ্বংস করে দিতে চায় না। শিক্ষায়, দীক্ষায় ও সংস্কৃতিতে যে উজ্জ্বল ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সেই উজ্জ্বল ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আরও উজ্জ্বল করতে চায় কিনা- এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে উন্নয়ন, সেই উন্নয়নকে আমরা অব্যাহত রাখতে চায় কী চায় না? অবশ্যই চায়।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এবারের নির্বাচন সারাদেশের জন্য একটি অসাধারণ নির্বাচন। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন। দুনিয়াব্যাপী আমাদের যারা শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন, তারা এবং আমাদেরকে যারা পছন্দ করেন না তারা,উভয় পক্ষই চান এবারের নির্বাচনটা একেবারেই নিপাট ভদ্রলোকের নির্বাচন হোক। সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। সেই জন্যই আপনারা যুবলীগের নেতারা তালিকা দিয়েছেন, আপনারা প্রত্যেক কেন্দ্রে কেন্দ্রে কাজ করবেন। এই কেন্দ্রগুলো যাতে একেবারেই সুন্দর পরিবেশে থাকে এই দায়িত্ব আপনাদের কাছে অর্পণ করলাম। ভোটার যাতে নিশ্চিতে ভোট দিতে যায় সেই দায়িত্বে আপনারা থাকবেন। আপনাদের সাথে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের কর্মীরাও থাকবে। আর থাকবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সচেতন মানুষেরা সুতরাং আপনাদের দ্বিধা এবং দ্বন্দ্বের কিছু নাই।
তিনি বলেন, আপনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সকলেই অবগত আছেন। এই ইতিহাস এবং ঐতিহ্য, এটি কিন্তু সাধারণ কোনো বিষয় নয়। ঐতিহ্য গড়ে তুলতে হয়। আমাদের শতবর্ষের ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে। এটিকে বলা হয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির রাজধানী। এসব নিঃশেষ করে দিবেন নাকি আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবেন? আরও উচুতে নিয়ে যেতে হবে। প্রথম বাঙালি মুসলমান ব্যারিস্টার আব্দুর রসূল, বাড়ি কই? ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত, বাড়ি কই? ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, বাড়ি কই? ব্রাহ্মণবাড়িয়া। স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব আব্দুল কুদ্দুস মাখন, বাড়ি কই? ব্রাহ্মণবাড়িয়া। পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের মুখের ওপরে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষার পক্ষে প্রথম যিনি দাবি তুলেছেন, তিনি ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, বাড়ি কই? ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এই হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেন বহাল থাকে সেটির জন্য সকলকে কাজ করতে হবে।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে মাথা উঁচু করে দীপ্ত কণ্ঠে বলতে পারেন, এই দেখো বাংলার মানুষ আমাকে সমর্থন করেছে। এখানে ভোট পড়েছে ৭০ পার্সেন্ট আর ভোট পেয়েছি আমি ৬৫ পার্সেন্ট, এটা যেন তিনি জোর গলায় বলতে পারেন এবং আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেন বলতে পারি, নেত্রী- আপনার সারা বাংলাদেশে আমরা প্রথম হয়েছি।
জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি শাহনূর ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌসের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন,, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ কোর্টের বিজ্ঞ পিপি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম খোকন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লোকমান হোসেন প্রমুখ।