দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার গুরুত্ব প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, একটা উদ্দেশ্য আমরা বলে থাকি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করা। জাতির জন্য, দেশের জন্য, আমাদের অস্তিত্ব ও দেশের অর্থনীতির জন্য এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আজ শুক্রবার বেলা একটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে এসব কথা বলেন আনিছুর।
গত বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভিডিও বার্তায় নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে ভোটে অংশ না নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কারা কারা সংসদ সদস্য হবে, ইতিমধ্যেই তালিকা হয়ে গেছে। রিজভীর এমন বক্তব্যের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, এটা ওনার বক্তব্য। ওনার কাছে (সংসদ সদস্যের) তালিকা থাকলে প্রকাশ করতে বলেন। এটা নিয়ে আমরা কিছু বলব না। যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছেন, তারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছেন। তারা রাষ্ট্রের কর্মচারী, কোনো দলের কর্মচারী না, কোনো সরকারের কর্মচারী না।
নির্বাচনে প্রশাসনের যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা সুচারুভাবে পালনের আহ্বান জানিয়েছেন আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, সংবিধানের ১২৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্বাহী বিভাগের সবার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেওয়া। নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রের যাকে সেখানে প্রয়োজন, তাকে সেই দায়িত্ব দিয়েছেন। এই দায়িত্ব যদি পালন না করেন, অপরাধ যেটা হবে, এই অপরাধের জন্য দায়ী হবেন।
নির্বাচন ‘সিলেকশন’ হয়ে গেছে প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, কোনো সিলেকশন হবে না। সুষ্ঠু, অবাধ, সুন্দর নির্বাচন হতে হবে। ভোট দিতে হবে। আরেকটি সংশোধনী হয়েছে, ব্যালট পেপার সকালে যাবে। ব্যালট পেপারের যে অংশটা ভোটারকে দেওয়া হবে, আগে শুধু সেখানে ব্যালট পেপারের উল্টো দিকে সিলমোহর দেওয়া হতো। এবার কিন্তু সেখানে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকতে হবে। এটাও আমরা আইনে সংযোজন করেছি। এটা ছাড়া কেউ জোর করে ভোট দিলে সেটি গণনা করা হবে না। সেই ভোট বাতিল ভোট ও অবৈধ ভোট বলে বিবেচিত হবে।
আনিছুর রহমান জানান, সেনাবাহিনী ও বিজিবি ২৮ ডিসেম্বর নিজ নিজ এলাকায় চলে যাবে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব মিলিতভাবে টহল দেবে। সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশের জন্য প্রচার-প্রচারণায় প্রার্থীসহ সবাইকে আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান এই নির্বাচন কমিশনার।
প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, কেউ যদি পক্ষপাতমূলক আচরণ করে, কোনো নির্বাচনী কর্মকর্তা, কোনো প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা এই নির্বাচনের সঙ্গে যারা জড়িত, কেউ যদি পক্ষপাতমূলক আচরণ করে, যদি নিরপেক্ষতাহীনতার প্রশ্ন দেখা দেয়, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে তাদের যে অবস্থা হবে, সেটা বলে দিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তাৎক্ষণিকভাবে তারা বরখাস্ত হতে পারেন। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিলে তাদের বেতনের স্কেল নিচে নেমে যেতে পারে। কেউ হয়তো নিম্ন পদে চলে যেতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া আছে চাকরির বিধিতে।
নির্বাচনে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, কোথাও যাওয়ার পথে বা দায়িত্ব পালনে কেউ বাধা দিলে, তারা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ দিতে পারেন, তারা জুডিশিয়াল ট্রায়াল করবেন। সংক্ষিপ্ত বিচার করে তারা ৭ বছর পর্যন্ত জেল দিতে পারবেন অথবা অর্থদণ্ড দিতে পারবেন অথবা উভয় দণ্ড দিতে পারবেন। এটা আগে ছিল না। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক থাকবেন। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং সাংবাদিকেরা যেন নিরাপদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সে জন্য এমনটা করা হয়েছে।