বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী দেশ অ্যাঙ্গোলা ওপেক থেকে নিজেদের সদস্যপদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানোর পর আন্তর্জাতিক বাজারে ফের হ্রাস পেয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার চাঙা রাখতে তেল উত্তোলন ও রপ্তানিকারী দেশগুলোর জোট ওপেক গত কয়েক মাস ধরে তেলের উত্তোলন হ্রাসের যে পদক্ষেপ নিয়েছে— মূলত সেটিই অ্যাঙ্গোলার এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ।
আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের এই দেশটির জ্বালানি তেল বিষয়ক মন্ত্রী দিয়ামান্তিনো এজেভেদো এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ওপেকের নীতি অ্যাঙ্গোলার জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ কারণে জোট থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাঙ্গোলা।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে প্রতি ব্যারেল ( ১ ব্যারেল= ১৫৯ লিটার) ব্রেন্ট ক্রুড তেল ৭৯ দশমিক ৩৯ ডলারে এবং ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেল ৭৩ দশমিক ৮৯ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
কিন্তু অ্যাঙ্গোলার সিদ্ধান্ত প্রচারিত হওয়ার পর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উভয় বেঞ্চমার্কের দাম প্রতি ব্যারেলে কমেছে ১ ডলার করে।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ইরান, অ্যাঙ্গোলা, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, কঙ্গো, নাইজেরিয়াসহ জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা বিশ্বের ১৪টি দেশের জোট অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম একপোর্টিং কান্ট্রিজ বা ওপেক। পরে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রপ্তানি বাণিজ্যে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ রাশিয়া এই জোটের সদস্য হওয়ার পর সংস্থার নতুন নাম হয় ওপেক প্লাস।
গত অক্টোবরে জোটগতভাবে তেলের দৈনিক উত্তোলন ১০ লাখ ব্যারেল বা তারও বেশি হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নেয়; অর্থাৎ শতাংশ হিসেবে নিজেদের সক্ষমতার নিরিখে এক শতাংশ কম তেল উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক।
পরবর্তীতে একাধিক দফায় তেলের উত্তোলন আরও কমানো হয়। বর্তমানে জোটের ১৪টি দেশ প্রতিদিন ২ কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোরণ করছে এবং তার মধ্যে ১১ লাখ ব্যারেল তেলের যোগান আসছে অ্যাঙ্গোলার বিভিন্ন খনি থেকে।
সৌদি আরব, আমিরাত, রাশিয়ার মতো বৃহৎ অর্থনীতি আফ্রিকার দেশ অ্যাঙ্গোলার নেই। এই দেশটির প্রধান রপ্তানি পণ্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেল।
আন্তর্জাতিক শিপিং ট্র্যাক ও জ্বালানি তেলের বাজার বিশ্লেষণকারী সংস্থা কেপলারের কর্মকর্তা ম্যাট স্মিথ রয়টার্সকে বলেন, ‘অ্যাঙ্গোলার এই সিদ্ধান্ত আমাদের ইঙ্গিত দিচ্ছে যে অপরিশোধিত তেলের বাজার চাঙা করতে ব্যর্থ হয়েছে ওপেক। আরও ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এতদিন আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে ওপেক প্লাসের একচেটিয়া ব্যবসা ছিল, তাতেও আঘাত আসছে।’
‘সামনের দিনগুলোতে সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করবে। ওপেক যদি দুর্বল হয়, তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি উত্তোলন বিষয়ক সরকারি তথ্য সংস্থা ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহ ধরে দেশটির বিভিন্ন খনি থেকে প্রতিদিন ১ কোটি ৩৩ লাখ ব্যারেল তেল তোলা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে দৈনিক ভিত্তিতে এত পরিমাণ তেল উত্তোলনের রেকর্ড নেই। দেশটি ওপেকের সদস্যও নয়।