জাপানে রপ্তানি ৪৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনেতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) চুক্তি সই করতে জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপ রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। এসময় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনেতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) শেষ পর্যন্ত কি সম্পাদিত হবে, নাকি আটকে যাওয়ার শঙ্কা আছে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, আমি খুবই আনন্দিত। কারণ প্রথমবারের মতো জাপানের মতো একটি বড়ো দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সই (ইপিএ) নিয়ে সত্যিকারের কোনো আলোচনা হতে যাচ্ছে। জাপান একটি উন্নত দেশ, অনেক বড়ো অর্থনীতি, আমরা তাদের সঙ্গে আমরা অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি করতে যাচ্ছি। এর আগে শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের মতো ছোটোখাটো অনেক অর্থনীতির সঙ্গে ইপিএ নিয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তাদের সঙ্গে এ সম্পর্কিত আলোচনায় যাওয়া যায় কি না, আমরা সেই চেষ্টাই করেছি। সম্প্রতি আমরা ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের সঙ্গে তিন দফা বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু তা ছিল অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ)। খুবই সীমিত সুযোগ। ধরুন, আমরা কিছু পণ্য বাছাই করি, যেগুলো তাদের শুল্কমুক্ত করে দেবো, তারও এভাবে আমাদের কিছু পণ্য দেবে। এখানে অন্য কোনো সুযোগ থাকে না। কিন্তু জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) কেবল বাণিজ্যের মধ্যেই সীমিত থাকবে না, এখানে বিনিয়োগ, সরকারি ক্রয়সহ সেবাখাতেও বিনিয়োগ হবে।
ইপিএ থেকে বাংলাদেশের কী সুবিধা অর্জিত হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশ এখান থেকে লাভবান হবে। এটি থেকে প্রথমে যে অর্জনটি আসবে, সেটি হচ্ছে বাংলাদেশি পণ্য তাদের বাজারে শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশ করতে পারবে। ২০২৬ সালের পরও জাপানের বাজারে আমরা এই সুবিধা পাবো। প্রতি বছর দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগও বাড়ছে।
তিনি বলেন, গত বছর জাপানে রপ্তানি ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। এটা খুবই উল্লেখযোগ্য। অন্য কোনো উন্নত দেশে আমরা এটি অর্জন করতে পারিনি। তারপর জাপান যেহেতু অন্যান্য দেশে প্রচুর এফডিআই করে, আমাদেরও উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্লোবাল ভ্যালু চেইন মার্কেটে নিয়ে যাওয়া। তৈরি পোশাক বলি, জুতা বলি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পণ্যটি রপ্তানি করি। এখনকার আইডিয়া হলো মেকিং দ্য ওয়ার্ল্ড। গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে ঢুকতে গেলে বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে। আমরা তখন ইন্টারমিডিয়ারি গুডস (মধ্যবর্তী পণ্য) অন্য দেশে রপ্তানি করতে পারবো। আমরা তো ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছি, জাপানি বিনিয়োগকারীরা সেই সুযোগ ব্যবহার করতে পারেন। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে।
‘আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো আমরা এমন অনেক অবকাঠামোও প্রস্তুত করেছি। সেখানে জাপানি বিনিয়োগকারীদের আলাদাভাবে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে তাদের যদি কোনো সমস্যা হয়, সেটা আলাদাভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি। কাজেই জাপানের সঙ্গে অংশীদারত্ব চুক্তি সই নিয়ে আমরা আশাবাদী হতে পারি। আমরা আশাবাদী, ২০২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর কিংবা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে আমরা চুক্তি সই করতে পারবো। কারণ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কারণে ২০২৬ সালের নভেম্বরে আমরা সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাতে যাচ্ছি। কিন্তু এরই মধ্যে চুক্তি সই হলে, সেটা হারাতে হবে না।’ বলেন বাণিজ্য সচিব।
এসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, এই চুক্তি থেকে দুইপক্ষ কী পরিমাণ লাভবান হবে, সেটা আগে বলা কঠিন। তবে এটি কেবল শুল্কের সঙ্গেই সম্পর্কিত না, সেবাখাত, বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নতকরণসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। এ চুক্তি থেকে জাপান-বাংলাদেশ দুদেশই লাভবান হবে। ২০২৬ সালের মধ্যেই চুক্তিটি করতে হবে। যে কারণে বর্তমান পরিস্থিতি একটু ভিন্ন।