ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ছয়টি সংসদীয় আসন থাকলেও ৩ (সদর, বিজয়নগর) আসন আওয়ামী লীগের কাছে কৌশলগতসহ বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, আহমদিয়া মুসলমানের বসবাস হওয়ায় আসনটি রাজনৈতিকভাবে ‘স্পর্শকাতর’। আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত ধর্মনিরপেক্ষ নেতার বদলে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ‘অঘোষিত প্রার্থীর’ দখলে যেন চলে না যায় আসনটি, এ বিষয়ে সতর্কতা আছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। এ আসনের অর্ন্তভুক্ত এলাকা সদরসহ বিজয়নগর। যে কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে জেলা সদর এলাকা অর্ন্তভুক্ত থাকা সংসদীয় আসন বিশেষ গুরুত্বের। জেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও নেতৃত্বের প্রভাব পড়ে অন্য উপজেলাগুলোতে।
জেলা পর্যায়ে দলের নেতৃত্ব ত্যাগী ও আদর্শবান রাজনীতিবিদের হাতে থাকলে এবং তেমন নেতা দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে প্রায় পুরো জেলায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙা থাকে বলে রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন। জেলার আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করতে দলগুলো ভোটের আগে সাংগঠনিক কার্যক্রমে বেশি জোর ও গুরুত্ব দেয়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের এসব কৌশলের প্রতিফলন ঘটছে।
রাষ্ট্রপিতা (ফাউন্ডিং ফাদার অব দ্য নেশন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন পরিচিতি পায় ‘বিএনপির দূর্গ’ হিসেবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আহমদিয়া মুসলমানরা ধারাবাহিক নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন। তবে এ জেলা এখন আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি। টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকায় জেলা আওয়ামী লীগ, দলের অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনগুলো তৃণমূল পর্যায়ে সুসংগঠিত। নবম সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘুরে দাঁড়ায় জেলা আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসাম্প্রদায়িক উদারচিন্তা প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে সেখানে।
এসবের কৃতিত্ব জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের একটানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উন্নয়নের রূপকার তিনি। এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই তিনি জেলার উন্নয়ন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর থেকে মোকতাদিরের উন্নয়ন যাত্রা। এ জেলার মাটি ও মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, আবেগ হৃদয়জুড়ে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ভালোবেসে তিনি এ জেলাতেই পড়ে থাকেন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নৌকার বিজয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মোকতাদির চৌধুরীর ওপরই আস্থা রেখেছে। তাঁকেই নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর তনয়া, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ভোটাভুটিতে বিএনপি ও দলটির মিত্ররা অংশ না নেওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগ এবার ‘বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। অন্যান্য বছরের মতো দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে কেউ ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া, দল থেকে বহিষ্কারের কথা এবার বলছে না ক্ষমতাসীন দল। তবে দলের মনোনীত ও ১৪ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ী করতে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে আওয়ামী লীগের নির্দেশনা দেওয়া আছে।
বিশেষ করে, কোনো জেলা সদরের সীমানা থাকা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনারও নির্দেশ আছে। গত পনেরো বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সার্বিক উন্নয়ন ও আরেকবার জয়ী হলে তাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা তুলে ধরে ভোটদাতাদের নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা আছে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের ওই নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নের চেষ্টা দেখা যায় ৩ সংসদীয় আসনের বিভিন্ন এলাকায়। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী নৌকার প্রার্থী মোকতাদির চৌধুরীর পক্ষে, তারা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন নানাভাবে। সব শ্রেণি, পেশার ভোটদাতার কাছে যাচ্ছেন। মোকতাদির চৌধুরীও অক্লান্ত ছুটছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। জনমানুষের জন্য, জনমানুষকে দিয়ে হওয়া নেতারা ভোটর আগে যা করেন, তিনিও তা করছেন। এ আসনজুড়ে উৎসবের আমেজ, সবখানে ভোট উৎসবের গন্ধ।
মোকতাদির চৌধুরীর সঙ্গে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদর উপজেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান ও মাদক মামলার আসামি ফিরোজুর রহমান ওলিও। জনমানুষের নায়ক মোকতাদিরকে হারাতে ওলিও জেলার চিহ্নিত কয়েক সাম্প্রদায়িক, মাদক কারবারি, দাগী আসামিকে নিয়ে ‘নির্বাচনী তৎপরতা’ চালাচ্ছেন। ওলিও আসলে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ‘অঘোষিত প্রার্থী’ বলে অনেক ভোটার মনে করেন। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরা নেই। দলের মূল প্রার্থী মোকতাদির হওয়ায় নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ীসহ জনস্রোত তাঁর দিকে।