ইত্তেফাক প্রকাশককে উপজেলা চেয়ারম্যানের কটূক্তি, ইসিতে অভিযোগ

ভান্ডারিয়া থানার ওসির সঙ্গে মিরাজুল ইসলাম মিরাজ।

আচরণবিধি ভঙ্গ করে নির্বাচনী প্রচারণায় দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশক তারিন হোসেনের উদ্দেশ্যে কটূক্তি বা চরিত্রহনন করে বক্তব্য দিয়েছেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। ওই ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বরাবর আবেদন জানিয়েছেন পিরোজপুর-২ আসনের নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মেজো মেয়ে তারিন হোসেন।

এর আগে ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মিরাজ রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে এক সাংবাদিককে উপজেলা চত্বরে টাঙিয়ে পেটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছিলো। ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠিও দিয়েছিলো। কিন্তু অদৃশ্য কারণে আজ পর্যন্ত বিতর্কিত মিরাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে মিরাজ। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ইত্তেফাকের প্রকাশককে নির্বাচনী প্রচারণায় আপত্তিকর, কুরুচিপূর্ণ এবং চরিত্রহনন করে বক্তব্য দেন।

universel cardiac hospital

বৃহস্পতিবার সিইসির কাছে আবেদন জানিয়ে তারিন হোসেন বলেন, ‘আমি পিরোজপুর-২ আসনের একজন ভোটার। আমার দাদা মরহুম তোফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া), দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে আমি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার পিতা আনোয়ার হোসেন (মঞ্জু) আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ উপজেলা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মহিউদ্দীন মহারাজ।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, মহিউদ্দীন মহারাজের নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে ২৪ ডিসেম্বর ভান্ডারিয়ার ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নের আহজারিয়া মাদ্রাসায় এক নির্বাচনী জনসভায় প্রার্থী মহিউদ্দীন মহারাজের উপস্থিতিতে তার ভাই ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ আমাকে ঘিরে অত্যন্ত আপত্তিকর, কুরুচিপূর্ণ, অশালীন, মিথ্যা, বানোয়াট, বেআইনি, মানহানিকর ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। উক্ত বক্তব্য সুস্পষ্টতই সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ (সর্বশেষ সংশোধিত ২০২৩) এর লঙ্ঘন।

লিখিত অভিযোগে তারিন হোসেন বলেন, মিরাজ তার ২০ মিনিটের বক্তব্যের কিছু অংশ নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলঃ ‘তার (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) পরিবারের মতো চরিত্রহীন বাংলাদেশ দ্বিতীয় কোনো পরিবার আছে কিনা আমার জানা নাই। এরপর যদি কেউ নোংরা কাজ করে থাকে-তার সন্তান-এক এক জনের ৪ জন ৫ জন বিয়া, জানেন? একেকটা মেয়ের ৪ জন। তার চেয়ে আরও মজার বিষয় কি জানেন? নিক্সন চৌধুরী সাহেব যারে বিয়া করসে না এখন আসে তারিন সাহেব, তার হইসে বর্তমানেও স্বামী হইসে ২ জন। ২ জন কে রকম জানেন? ইত্তেফাকের যে ডিরেক্টর, সে উপস্থিত থাকতে, তাকে তালাক দেওয়া ছাড়া, সে (মিসেস তারিন হোসেন) নিক্সন চৌধুরী সাহেবকে বিয়া করসে। তাইলে সেটা কি বৈধ আমাদের সমাজে? বাংলাদেশ কি বৈধ? যার (মিসেস তাসমিমা মঞ্জু) মেয়ে ২ স্বামী নিয়া থাকে, তারা কি চরিত্রহীন আমার মা বইনেরে বলতে পারে? তারা ধাপে ধাপে দালালি কইরা গেসে। আমি আর অন্য শব্দ নাই ব্যবহার করলাম। অতএব তাদেরকে আসলে উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে। তার এইরূপ বক্তব্য নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার বিধি ১১(ক) সহ অন্যান্য ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

পাশাপাশি তার বক্তব্য বাংলাদেশের অন্যান্য প্রচলিত আইন, যেমন বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ সহ বিভিন্ন আইন অনুসারে ফৌজদারি অপরাধও বটে। তার এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন বক্তব্যের কারণে আমি আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, পিরোজপুর-২ আসনের ভোটার এবং সমগ্র এলাকাবাসীর কাছে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। তার বক্তব্য এখনো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা প্রতিনিয়ত সম্প্রচারিত হচ্ছে যা আমাকে প্রতিনিয়ত হেয় প্রতিপন্ন করছে এবং চরম সামাজিক ও মানসিক পীড়া দিচ্ছে।

বিধিমালা ১১ অনুসারে ব্যক্তি উস্কানিমূলক বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান, উচ্ছৃঙ্খল আচরণে বাধা নিষেধ আছে। কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা উহার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাহাদের পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি বিধি-১১ এর (ক) অনুসারে ‘নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্রহনন করিয়া বক্তব্য প্রদান বা কোন ধরণের তিক্ত বা উস্কানিমূলক মানহানিকর) কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো বক্তব্য প্রদান করিতে পারিবেন না।’ তা সত্ত্বেও উক্ত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনাকালে তার ভাই এসব বক্তব্য প্রদান করেন। এমতাবস্থায়, একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হিসেবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগ (ভিডিওসহ) আপনার নিকট দাখিল করলাম।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ নজরে এসেছে। অভিযোগ তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন