পৌনে ৪ কোটি শিক্ষার্থী নতুন বইয়ের ঘ্রাণের অপেক্ষায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বছরের প্রথম দিনে পৌনে ৪ কোটির বেশি শিক্ষার্থীর হাতে উঠবে নতুন বই। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়াবে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ। বই উঁচিয়ে শিক্ষার্থীরাও নতুন বছরে জ্ঞানার্জনে শপথ নিয়ে ঘরে ফিরবে। রাত পোহালেই সারাদেশে আয়োজিত বই উৎসবে দেখা মিলবে এমন দৃশ্যের।

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বই উৎসব’র উদ্বোধন করেন। তবে মূল উৎসব হবে সোমবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায়। সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে এ সময়ে বই উৎসব শুরু হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বই উৎসবের আয়োজন করা হলেও মাধ্যমিকে তা থাকছে না। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সম্মতি না পাওয়ায় মাধ্যমিকের আয়োজন করা হয়নি।

এদিকে, নির্বাচনী তৎপরতায় এবার বই উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়লেও শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের কমতি থাকবে না। আয়োজন যেন ফিকে না হয়ে যায় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখছে শিক্ষা প্রশাসন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, প্রাথমিক, মাদরাসা ও কারিগরি অধিদপ্তর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে বিনামূল্যে বই বিতরণের নির্দেশনা দিয়েছে।

আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে বই উৎসব উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

শতভাগ উপজেলায় নতুন বই পৌঁছে দেওয়ার কাজে তৎপর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সবগুলো বই হাতে পেতে পারেন। তবে অষ্টম ও নবমের শিক্ষার্থীদের ৫-৬টা করে বই দেওয়া হতে পারে। পরে কয়েক ধাপে তাদের সব নতুন বই দেওয়া হবে।

পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা ধরা হয়েছে তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। তাদের জন্য বই ছাপা হয়েছে মোট ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি। প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো হয়েছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৪২৩ কপি বই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ ১ হাজার ২৭৪টি। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮ কপি বই ছাপা হয়েছে।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছয় কোটি ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৮ কপি, সপ্তম শ্রেণির চার কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার কপি, অষ্টম শ্রেণির জন্য পাঁচ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির জন্য পাঁচ কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি বই ছাপা হচ্ছে।

অন্যদিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (পাঁচটি ভাষায় রচিত) শিশুদের জন্য এবার মোট দুই লাখ পাঁচ হাজার ৩১ কপি বই ছাপা হচ্ছে। অন্য বইয়ের মধ্যে পাঁচ হাজার ৭৫২ কপি ‘ব্রেইল’ বই ছাপা হবে। তাছাড়া শিক্ষকদের ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি ‘শিক্ষক সহায়িকা’ দেওয়া হবে।

জানা গেছে, ৯ শ্রেণির মধ্যে এবার ৭ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে লেখা বই দেওয়া হবে। সেগুলো হলো- প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম। এসব শ্রেণির বইগুলো পাণ্ডুলিপি নতুন করে লেখা। শুধু চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আগের শিক্ষাক্রমের বই পাবে।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ৯৭ শতাংশ উপজেলায় বই পৌঁছে গেছে। বাকি উপজেলায় রাতের মধ্যেই বই পৌঁছে যাবে। আগামীকাল সোমবার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই উৎসব হবে।’

প্রাথমিকের বই উৎসব মিরপুরে

প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বই উৎসবের কেন্দ্রীয় আয়োজন রাজধানীর মিরপুরে। সোমবার সকাল ১০টায় মিরপুর ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।

বই পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের তা যত্নে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বই উৎসব উদ্বোধনকালে শিক্ষার্থীদের নতুন বই যত্নে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ছোট্ট সোনামণিদের বলবো—বইগুলো যত্নে রাখবা। নিয়মিত যত্ন নিবা, যেন দ্রুতই ছিঁড়ে না যায়। আগে তো পুরোনো বই দেওয়া হতো। ছেঁড়া, জীর্ণশীর্ণ থাকতো। এখন সবাই নতুন বই পায়। নতুন বইয়ের ব্যাপারটাই আলাদা। নতুন বই খুলবে, ঘ্রাণ নিবে, মলাট লাগাবে, নাম লিখবে; কত কী কাজ!’

শেয়ার করুন