রিজার্ভেও আইএমএফের শর্ত পূরণ করলো বাংলাদেশ

মত ও পথ ডেস্ক

রেমিট্যান্স
ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের দেওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্ত পূরণ করলো বাংলাদেশ। দেশের বেশিরভাগ ব্যাংক ডলার সংকটে থাকার পরও আইএমএফের শর্তানুযায়ী, রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ডলার সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো উৎসাহিত করতে নানামুখী কার্যক্রম, রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে দ্রুত ঋণের অর্থ ছাড় এবং সর্বোপরি গৃহীত উদ্যোগের ফলে রিজার্ভ সংরক্ষণে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর (রবিবার) শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট রিজার্ভ প্রায় ১৭.৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফের কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত বেঁধে দেওয়া ছিল যে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ১৭.৪৮ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হবে। সেই হিসাবে নিট রিজার্ভ সংরক্ষণে আইএমএফের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অবশ্য আইএমএফের দেওয়া বেশিরভাগ শর্তই (দুটি ছাড়া) পূরণ করতে পারায় সংস্থাটির কাছ থেকে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় পেয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে বাজেট, সামাজিক ব্যয়, উন্নয়নমূলক কাজে বিনিয়োগের মূলধন ও রিজার্ভ অর্থের সর্বোচ্চ সীমার মতো পরিমাণগত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হয়েছে।

আইএমএফের পরামর্শে আরও যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে—সুদের হার নির্ধারণে করিডোর সিস্টেম গ্রহণ, আইএমএফের বিপিএম-৬ সংজ্ঞা অনুসারে রিজার্ভের প্রতিবেদন প্রকাশ ও মুদ্রার বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার প্রবর্তন করা। ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি কর্মপরিকল্পনা শেষ করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশের কথা ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

সময়ভিত্তিক শর্ত পালনের অগ্রগতি দেখতে গত ৪ অক্টোবর আইএমএফের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি মিশন ঢাকায় আসে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বৈঠক করে এ মিশন। মিশনটি আসে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে প্রথম পর্যালোচনা বৈঠক করতে।

বৈঠক শেষে আইএমএফের দল দেখতে পায় যে রিজার্ভ এবং রাজস্ব আয় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকও জানিয়েছিলেন—সরকার গত জুনের জন্য ৬টি শর্ত পূরণ করেছে। কিন্তু দুটি শর্ত পূরণ করতে পারেনি। বাংলাদেশকে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ ছাড় দেওয়ার আগে তিনি জানিয়েছিলেন—বেশ কিছু বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন থাকলেও দুটি বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। সেগুলো হচ্ছে— নির্ধারিত রিজার্ভ সংরক্ষণ ও নির্ধারিত হারে ট্যাক্স রেভিনিউ অর্জন।

এদিকে গত ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রথম রিভিউ প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা আগের ২৬.৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ১৭.৭৮ বিলিয়ন নির্ধারণ করে দেয় আইএমএফ। আইএমএফ জানিয়েছে, জুনের নিট রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুনে ২৩.৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট রিজার্ভ ছিল ১৯.৫ বিলিয়ন ডলার।

ঋণ প্যাকেজের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে আইএমএফ নিট রিজার্ভ সিলিং ঠিক করে দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সে তথ্য আইএমএফ ছাড়া কারও কাছে প্রকাশ করে না।

অবশ্য এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করে দুই ধরনের তথ্য। ২৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৭ ডিসেম্বর গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ৮২ (২৬ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। আর বিপিএম-৬ (আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল ৬ সংস্করণের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রস আন্তর্জাতিক রিজার্ভ সংকলন করেছে, যা বিপিএম-৬ নামে পরিচিত) অনুযায়ী ২৭ ডিসেম্বর ছিল ২১ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। এটাকেই বাংলাদেশ ব্যাংক নেট রিজার্ভ হিসাবে গণমাধ্যমকে বলে থাকে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ ডিসেম্বর আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৬৮৯ মিলিয়ন ডলার যোগ হয়। একই দিনে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণের ৪০০ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। অন্যান্য উৎস থেকেও আরও রিজার্ভ জমা হয়। বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেও ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যাংকগুলো থেকে ১.০৪ বিলিয়ন ডলার কিনেছে।

যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যাংকগুলোর কাছে ৬.৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের অর্থবছরের একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করেছিল ৭.৮ বিলিয়ন ডলার।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। ধীরে ধীরে এর সুফলও মিলছে। রিজার্ভ সংরক্ষণে ডিসেম্বরের শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে চলেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩.৫৮ ডলার বিক্রি করা হয় আমদানি বিল পরিশোধের জন্য।

শেয়ার করুন