নির্বাচন কমিশন (ইসি) উদ্যোগ নিলে ঘণ্টাখানেক পর থেকে দেশের নাগরিকরা দেখতে পারবেন, ভোটের মাঠে কালো টাকা ছড়ানো রোধে প্রকৃত ও কার্যকর উদ্যোগ। এক্ষেত্রে ইসি ভারতের সাবেক নির্বাচন কমিশনার টিএন শেসনের কমিশনের আলোচিত উদ্যোগকে অনুসরণ করতে পারে। ১৯৯৩ সালে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ, কর্ণাটক ও সিকিমের প্রাদেশিক নির্বাচনকালে অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ও প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নিতে টিএন সেশনের নেতৃত্বে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন তখন সব প্রার্থীর প্রতিদিনের নির্বাচনী খরচ প্রতিদিন তদারকি করতে অডিটর নিয়োগ করে।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অবৈধ টাকার ঝনঝনানি রুখতে এমন উদ্যোগ নিতে পারে। প্রার্থীদের নির্বাচনী খরচে কালো টাকার বিস্তার রোধে অডিটর নিয়োগ দেওয়ার মতো ক্ষমতা, আইন ও লোকবল ইসির আছে। নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে প্রতিদিনের নির্বাচনী খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ দরকার। চলমান নির্বাচনে অনেক প্রার্থী কাগজে-কলমে ইসির নির্ধারিত সীমার মধ্যে খরচ দেখাচ্ছেন। বাকি অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় বা কালো টাকা। দেশের অর্থনীতির আকারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমে নির্বাচনে কালো টাকার বিস্তার বাড়ছে।
সংসদ নির্বাচনে কী পরিমাণ টাকা খরচ হয়, এর মধ্যে কালো টাকা কতো- এ বিষয়ে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের গবেষণা নেই। বেসরকারি কয়েকটি সংস্থার গবেষণা বলছে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনী অর্থনীতির আকার ছিলো ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতি নির্বাচনে এ হার ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ছে। ইসির কাজ শুধু নির্বাচন আয়োজনই নয়, রাজনীতিকে কালো টাকার বিষাক্ত কবল থেকে মুক্ত করাও তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। দুর্বৃত্ত, শোষক, বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তরা নির্বাচনে জয়ী হলে গণতন্ত্রের চর্চা ও দেশের ভবিষ্যৎ আরো বিপন্ন হতে পারে। তাদেরকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে আর সৎ, দক্ষ ও জনকল্যাণে নিবেদিতদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ করে দিতে ইসি অডিটর নিয়োগের উদ্যোগ নিতে পারে।
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ভোটাভুটি সামনে রেখে মাঠে উড়ছে অবৈধ টাকা। আওয়ামী লীগের মনোনীত ও ১৪ দলীয় জোটের সমর্থিতা অনেক প্রার্থী, কোনো কোনো সংসদীয় আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ইতোমধ্যে তথ্যসহ এমন অভিযোগ করেছেন। লুটেরা শ্রেণির প্রার্থী ও অবৈধ টাকার মালিকরা ভোটের মাঠ কলুষিত করছেন। এবার অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুণগত মানে পরিবর্তন ঘটাতে কালো টাকার ছড়াছড়ি থামানো প্রয়োজন। ইসি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানগুলো শুধু আক্ষরিক অর্থেই নয়, এর চেতনা এখনো বাস্তবায়ন করতে পারে। তা না করলে বিগত বিভিন্ন সরকারের আমলের মতো ইসি এ ক্ষেত্রে শুধু ‘সাক্ষী গোপাল’ হয়ে থাকার অভিধা অর্জন করবে।