ইসরায়েলের হামলায় হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা নিহত হওয়ায় লেবাননের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েছে। যে কোনো সময় দু’পক্ষের মধ্যে সীমান্তে যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে জ্যেষ্ঠ হামাস নেতা সালেহ আল আরৌরি নিহত হন।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, এ হামলার আগে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেনি। গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের হামলায় প্রথম কোনো শীর্ষস্থানীয় হামাস নেতা নিহত হলেন। এ ঘটনায় রামাল্লায় ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনিরা।
বুধবার সিএনএন এ খবর জানিয়েছে। লেবাননে হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। দেশটিতে থাকা জাতিসংঘ মিশন বৈরুতে হামলা নিয়ে সম্ভাব্য উস্কানি বন্ধে দুই পক্ষকে সংযত থাকতে বলেছে। দেশটিতে জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, তারা দুই পক্ষকে সংযত থাকতে বলছেন।
এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলকে উস্কানি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছে ফ্রান্সও। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন সরকারের সদস্য বেনি গাঞ্জকে একথা বলেন। মাখোঁ গাজায় বেসামরিক মানুষ হত্যা ও জরুরি মানবিক পরিস্থিতির জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গাজায় লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতিরও নিন্দা জানান।
হামাস জানিয়েছে, নিহত সালেহ আল আরৌরি তাদের রাজনৈতিক শাখার উপপ্রধান ছিলেন। বৈরুতে জায়নবাদী বিশ্বাসঘাতকদের বিমান হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন। আরৌরি হামাসের সামরিক শাখার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। হামলায় আরও পাঁচজন নিহত হন। তাদের মধ্যে আছেন– হামাসের সামরিক শাখার সামির ফিন্দি আবু আমের ও আজ্জাম আল-আকরা আবু আম্মার। ইসরায়েল এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা এটাকে কাপুরুষোচিত হামলা বলে বর্ণনা করেছে।
হামাস নেতা আরৌরিকে হত্যার ঘটনা যুদ্ধের পরিসর আরও বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে যুদ্ধ শুধু ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর এটা বৈরুতে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় হামলা। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেন, নতুন করে লেবাননকে লড়াইয়ে টেনে নেওয়ার জন্য এটা ইসরায়েলের নতুন অপরাধমূলক কাণ্ড।
লেবাননের সীমান্ত এলাকা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়ে আসছে হিজবুল্লাহ। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা থাকলেও রাজধানী বৈরুতে কখনও হামলা করেনি ইসরায়েল। এরই মধ্যে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ এক টেলিভিশন ভাষণে দেওয়া বক্তব্যে ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘শক্তিশালী জবাব’ দেওয়ার জন্য তাদের উস্কানি দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েলগামী আরও একটি কনটেইনারের জাহাজে হামলা চালিয়েছে হুতিরা। তাদের মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারিয়া বুধবার রয়টার্সকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হামলাই পাল্টা হামলা অথবা শাস্তি এড়াতে পারবে না। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় হুতিদের তিনটি নৌযান সাগরে ডুবে যায়।
চলমান পরিস্থিতিতে অবরুদ্ধ গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ২২ হাজার ৩১৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৭ হাজার ২৯৬ জন। ঘনবসতিপূর্ণ খান ইউনিসে হামলা হচ্ছে বেশি।
এ অবস্থায় গাজায় হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন মার্কিন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন। তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর ডানপন্থি মন্ত্রিসভা মানবিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। তারা হাজার হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে। ইসরায়েলের এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যারা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনবে; মাসের পর মাস ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে না। তিনি যুদ্ধবিরতির দাবি জানান। এ ছাড়া সিনেটর বার্নি স্যান্ডারস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইসরায়েল অনুদান দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তিনি গাজায় সামরিক অভিযানকে অনৈতিক বলে মন্তব্য করেন।
আইসিজেতে উপস্থিত হবে ইসরায়েল
ইসরায়েল বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার করা গণহত্যার মামলায় দ্য হগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আইসিজেতে তারা হাজির হবে। ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র আইলন লেভি এ তথ্য জানিয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা নিয়ে সম্প্রতি আইসিজেতে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা।