ওয়ার্নারের বিদায়ী টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে অজিদের বড় জয়

মত ও পথ ডেস্ক

ডেভিড ওয়ার্নার
ডেভিড ওয়ার্নার

সাজিদ আলীর বলে আউট হয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা দিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। পুরো স্টেডিয়াম তখন দাঁড়িয়ে। করতালি আর উল্লাসের ধ্বনিটাই কেবল ভেসে আসছে বিখ্যাত এসসিজি স্টেডিয়াম থেকে। চতুর্থ ইনিংসে ওয়ার্নার যখন ব্যাট করতে নামছেন, ততক্ষণে অনেকেই ধরে নিয়েছেন এই ম্যাচের ফলাফল। হলোও তাই। অস্ট্রেলিয়া জয় করেছে টেস্টটা। সঙ্গে নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের ধবলধোলাই।

তবে এসব ছাপিয়ে কীর্তিটা যেন শুধুই ওয়ার্নারের। ১৩০ রানের ছোট লক্ষ্যে খেলতে নেমে উসমান খাজা ফিরে গিয়েছেন প্রথম ওভারেই। শেষ টেস্টের শেষ ইনিংসে বন্ধু খাজা আগেভাগে ফিরলেও টিকে রইলেন ওয়ার্নার। খেললেন ৫৭ রানের ইনিংস। ওয়ার্নারের বাদবাকি ইনিংসের চেয়ে রানের সংখ্যায় এ হয়ত অনেকটা কম। তবে বিদায়বেলায় এমন ইনিংসের মাহাত্ম্য নেহাৎ ফেলনা নয়।

ওয়ার্নারের পাশাপাশি অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন মার্নাস ল্যাবুশেনও। অপরাজিত ৬২ রান করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া জয় পেয়েছে ৮ উইকেটে। তিন ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান হয়েছে ধবলধোলাই। ১৯৯৫ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদের জয় না পাওয়ার আক্ষেপটা আরও খানিক চওড়া হয়েছে এদিন।

চতুর্থ দিন পাকিস্তান খেলতে নেমেছিল ৬৮ রানে ৭ উইকেট নিয়ে। সেখান থেকে খুব বেশি দূর যাওয়া হয়নি পাকিস্তানের। ১১৫ রানেই শেষ হয়েছে পাকিস্তানের ইনিংস। লিড ছিল ১২৯। অজিদের সামনে টার্গেট ১৩০। নিজের শেষ ইনিংস খেলতে নেমে প্রতিপক্ষের গার্ড অব অনার পেয়েছেন ওয়ার্নার। খেলেছেন নিজের স্বভাবসুলভ ইনিংস। ৬১ বলে ৭ চারের সাহায্যে তুলে নিয়েছেন অর্ধশতক।

আমের জামালকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ দিনের শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। পাকিস্তানের ভাগ্যে কী আছে, তা বোঝা গিয়েছিল তৃতীয় দিনের শেষেই। তবে সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নটা তারা দেখেছিল, ফর্মে থাকা এই দুই ব্যাটারের কল্যাণে। কিন্তু অজিদের বোলিং আক্রমণের সামনে তা আর টিকলো কই। দলীয় ১০৯ রানে ন্যাথান লায়নের বলে লেগ স্লিপে ক্যাচ নেন ওয়ার্নার। ফিরে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান।

আর প্যাট কামিন্সের বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান আমের জামাল। ১০৯ রানেই নবম উইকেটের পতন। শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন হাসান আলী। পাকিস্তানের দলীয় রান ১১৫। অজিদের সামনে টার্গেট ১৩০।

ছোট লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই ডাক মেরে ফিরে যান উসমান খাজা। মার্নাস ল্যাবুশেনকে নিয়েই এরপর এগুতে থাকেন ডেভিড ওয়ার্নার। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি পাকিস্তানকে আর কোন সুযোগই দেয়নি। লাঞ্চের আগেই ওয়ার্নার তুলে নিয়েছেন তার টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ফিফটি। কাগজে কলমে সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল না নেই তার সামনে। ৩৭ ফিফটি আর ২৬ শতক নিয়েই থামতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি বনে যাওয়া এই ওপেনারকে।

শেষ পর্যন্ত ওয়ার্নার আউট হয়েছেন ৫৭ রান করে। তবে ততক্ষণে অজিদের জয় সময়ের ব্যাপার। স্টিভেন স্মিথকে নিয়ে বাকি কাজটা সহজেই শেষ করেছেন ল্যাবুশেন।

এর আগে সিডনি টেস্টের শুরু থেকেই কিছুটা হলেও আধিপত্য দেখিয়েছিল পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে রিজওয়ান এবং আমের জামালের আশি পেরুনো দুই ইনিংসে ভর করে পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে জমা করে ৩১৩ রান। জবাবে ২৯৯ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। সেখানেও কৃতিত্ব জামালের। ৬ উইকেট নিয়ে অজিদের বেঁধে ফেলেন তিনি। সফরকারীরা পায় কাঙ্ক্ষিত লিড।

কিন্তু, সেটা আর কাজে লাগাতে পারেনি তারা। জশ হ্যাজেলউড আর নাথান লায়নের তোপের মুখে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১১৫ রান তোলে শান মাসুদের দল। যেটা সিডনি অজিদের জয়ের জন্য বড় বাঁধা হতে পারেনি। পুরো সিরিজে দারুণ খেললেও শেষ টেস্টে এসে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছেন পাকিস্তানের আমের জামাল। আর সিরিজে অনবদ্য বোলিংয়ের সুবাদে ম্যান অব দ্য সিরিজ জিতেছেন প্যাট কামিন্স।

ওয়ার্নারকে বিশেষ উপহার পাকিস্তানের

২৬ সেঞ্চুরি, ৩৭ ফিফটির সঙ্গে ৮ হাজার ৭৩৬ রান। এক যুগে পেয়েছেন এক ডজন ওপেনিং সঙ্গী। তবে ডেভিড ওয়ার্নার ছিলেন অটল অবিচল। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে প্রায় এক যুগ ধরে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ছিলেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে ইতি টানলেন নিজের বর্ণাঢ্য টেস্ট ক্যারিয়ারের।

নিজের বিদায়ী ইনিংসেও ওয়ার্নার ছিলেন উজ্জ্বল। করেছেন অর্ধশতক। পাকিস্তানের ছোট লক্ষ্যের সামনে প্রথম ওভারেই দল উইকেট হারালেও বিপদ বাড়তে দেননি ওয়ার্নার। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কিছুটা আগ্রাসী ইনিংস খেললেও ছিল পরিপক্বতার ছাপ।

আর এমন এক ক্যারিয়ারের শেষে বিপক্ষ দল থেকেও সম্মান পেয়েছেন ওয়ার্নার। ম্যাচের শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে পাকিস্তানের অধিনায়ক শান মাসুদ ডেকে নেন ডেভিড ওয়ার্নারকে। সঙ্গে তুলে দেন বাবর আজমের জার্সি। যেখানে স্বাক্ষর করেছেন পাকিস্তান দলের সব সদস্য।

জার্সি তুলে দিতে গিয়ে ওয়ার্নারকে ধন্যবাদও জানান শান মাসুদ। শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘ধন্যবাদ তোমাকে। আমরা ভাবছিলাম পুরো দল তোমাকে বাবর আজমের জার্সি দেবো, এটা সৌজন্যতার স্মারক হিসেবে। তোমার জন্য শুভকামনা রইলো।’

উপহার দিতে কার্পণ্য করতে দ্বিধা করেননি ডেভিড ওয়ার্নার নিজেও। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে আউট হয়ে ফেরার পথে নিজের গ্লাভস ও হেলমেট ওয়ার্নার তুলে দিয়েছেন এক খুদে ভক্তের হাতে। সেই ক্ষুদে ভক্তের উচ্ছ্বাসটাও চোখে পড়েছে সবারই।

শেয়ার করুন