জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেখা দেওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে মন্দার মধ্যে রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহেও শেয়ারবাজার ছিল নেতিবাচক ধারায়। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে প্রধান মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি।
এমন নেতিবাচক বাজারেও বেড়েছে বাজার মূলধন। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ২০০ কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। বিপরীতে লেনদেন কমেছে ২০ শতাংশের ওপরে। এছাড়া প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ২ পয়েন্টের বেশি।
রোববার (৭ জানুয়ারি) ভোটের আগে সবশেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে। ভোটের আগে শেষ কার্যদিবসে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে বাড়ে সবকয়টি মূল্যসূচক। পাশাপাশি বাড়ে লেনদেনের গতি। তবে সপ্তাহের শেষদিনের এই ইতিবাচাক প্রবণতা পতন ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। ফলে সপ্তাহজুড়ে দাম কমার তালিকা বড় হওয়ার পাশাপাশি কমেছে মূল্যসূচক।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৯টির। এছাড়া ২০১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম অপরিবর্তিত থাকা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা সংকট থাকায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যা ছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২৩০ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ।
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচক কমে ২ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচক কমলেও বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে শূন্য দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
এছাড়া ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে এক দশমিক ৩২ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে এক দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ।
প্রধান মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৯৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৫০৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৫৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ২ হাজার ১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৪১৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে অলিম্পিক এক্সেসরিজ। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং স্টেশন, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ এবং এমারেল্ড অয়েল।