চট্টগ্রামে জামানত খোয়ালেন পাঁচ দলের ৬ চেয়ারম্যান-মহাসচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

বড় ধরনের সহিংসতা ছাড়াই শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এরই মধ্যে ২৯৮টি আসনে বেসরকারিভাবে ফলাফলও ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপি ও সমমনা কিছু দল এই নির্বাচন বর্জন করলেও ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এতে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে পাঁচটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান-মহাসচিব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারিয়েছেন। নির্বাচনে নতুন নিবন্ধিত বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) বাদেও তরিকত ফেডারেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ চেয়ারম্যান-মহাসচিবরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামানত হারিয়েছেন।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, নির্বাচনী আইন অনুযায়ী অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মোট গৃহীত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ কোনো প্রার্থী পেলে তিনি জামানত ফেরত পাবেন, এর কম পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

চট্টগ্রামের দুই রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে মোট ভোটার ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৩ জন। এর মধ্যে রোববার নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ২৩ লাখ ২৩ হাজার ৮০৫ জন। এখানে ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভাণ্ডারী এবং বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি আসনে), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে, দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ স উ ম আবদুস সামাদ চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এর চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) এবং ইসলামিফ ফ্রন্ট বাংলাদেশ’র মহাসচিব আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জুবাইর চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর) ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-ডবলমুরিং) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে নির্বাচনের দুই দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। যেহেতু তফসিল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় ব্যালটে তার প্রতীক রয়ে যায়, সে কারণে কিছু ভোটও পান তিনি।

রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ঘোষিত ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৭ জন। আসনটিতে নয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি নৌকা প্রতীকে এক লাখ ৬৮৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা হোসাইন মো. আবু তৈয়ব তরমুজ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৬৬ ভোট। এ আসনে ৩২ দশমিক ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ একতারা প্রতীকে পান তিন হাজার ১৫১ ভোট। পাশাপাশি তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ফুলের মালা প্রতীকে পান ২৩১ ভোট। ওই আসনে ভোট পড়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৫টি।

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৩ জন। আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুচ ছালাম কেটলি প্রতীকে ৭৮ হাজার ২৬৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আসনটিতে ভোট পড়েছে ২৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনএফ চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ টেলিভিশন প্রতীকে পান মাত্র ১৫৯ ভোট। এ আসনে মোট ভোট পড়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৯৪২টি।

চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর) আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৮৫ হাজার ৮০১ জন। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু ৫৯ হাজার ২৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আসনটিতে ২১ দশমিক ৬৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ আসনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ’র প্রার্থী দলটির মহাসচিব আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জুবাইর চেয়ার প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৫৬৫ ভোট। এ আসনে ভোট পড়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার ১৩৪টি।

চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ১১ হাজার ৮৫২ জন। নির্বাচনে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ ৫১ হাজার ৪৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে এ আসনে ভোট পড়েছে এক লাখ ৮৫১টি, শতাংশের হিসাবে ২০ দশমিক ৪৫। এ আসনে আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জুবাইর চেয়ার প্রতীকে পান দুই হাজার ১৫১ ভোট।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ২৯ হাজার ৪২৮ জন। নির্বাচনে আসনটিতে নয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে নৌকা প্রতীকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এক লাখ ২০ হাজার ৩১৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আসনটিতে ভোট পড়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৮টি বা ৫১ দশমিক ২৪ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন মোমবাতি প্রতীকে আট হাজার ২৯৮ ভোট পেয়েছেন। হিসাব অনুযায়ী জামানত ফিরে পেতে এ আসনে তাকে ২১ হাজারের মতো ভোট পেতে হতো।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে মোট ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৮ হাজার ২৯৩ জন। নির্বাচনে আসনটিতে আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী ৭১ হাজার ১২৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আসনটিতে ভোট পড়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ২৭০টি বা ৪০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট’র মহাসচিব সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ মোমবাতি প্রতীকে পেয়েছেন পাঁচ হাজার ২৩১ ভোট। জামানত ফেরত পেতে বিজিত প্রার্থীকে কমপক্ষে ১৪ হাজার ৬৫৮ ভোট পেতে হবে।

এদিকে রোববার (৭জানুয়ারি) সারাদেশে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটগণনা শেষে ২৯৮টি আসনে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩টি আসন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৬২টি, জাতীয় পার্টি (জাপা) পেয়েছে ১১টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি করে আসন।

শেয়ার করুন