দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় শতভাগ আসনের ফলাফল ঘোষণা শেষে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে দলটি টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে টানা চারবার এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
এই নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো অংশ নেয়নি। উল্লেখযোগ্য অনেক রাজনৈতিক দলের নির্বাচেন বর্জনের মধ্য দিয়েই সম্পন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।
৭৫—এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে দলের দায়িত্বগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে প্রথমবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি প্রধানমন্ত্রী নিবার্চিত হন। এরপর ২০২৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নিবার্চিত হন।
শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দল ও দেশ এগিয়ে চলছে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়। উন্নয়নশীল দেশ থেকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে। এমন মুহূর্তে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে তিনি টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হতে চলছেন। সেই সঙ্গে দলকে নিয়ে গেলেন রাষ্ট্রক্ষমতায়।
সরকার পরিচালনায় শেখ হাসিনা নানা সমালোচনা, প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে ইস্পাত কঠিন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোনোরকম শক্ত প্রতিদ্বন্দিতা ছাড়াই সরকার গঠন করতে চলছে।
তবে এবারের নিবার্চন নিয়ে দেশ—বিদেশে প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে আদালতের এক রায়ের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেন। যদিও আদালতের রায় এবং আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটির সুপারিশ ছিল আরও একাধিক মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নিবার্চন করার। কিন্তু ২০১১ সালের ৩০ মে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধান সংশোধনের সিদ্ধান্ত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৫ জুন কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দিয়ে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ চূড়ান্ত করে এবং ৮ জুন তা স্পিকারের কাছে পাঠায়। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চূড়ান্তভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকারের অধীনে সব সময়ই সুষ্ঠু নিবার্চনের শঙ্কা থেকে যায়। যে কারণে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। বিরোধী দল, দেশি—বিদেশি বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে ওই দুটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এর মধ্যে দশম সংসদে অর্ধেকেরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সংদস্য নির্বাচিত হন। পরবতীর্তে একাদশ সংসদে ভোটের দিনের আগের রাতেই ভোট নিয়ে ফেলার অভিযোগ তোলা হয়। বিভিন্ন এলাকায় সরকার দলীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা প্রকাশ্যে নিজেরাই রাতে ভোট নিয়ে নেওয়ার কথা বলেন। এবারের নির্বাচনের প্রচারণার সময়ও একাধিক স্থানীয় নেতার এমন বক্তব্য ভাইরাল হয়।
তবে আলোচনা-সমালোচনা, নিন্দা-প্রতিবাদ; সবকিছু ছাপিয়ে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে চলছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের আলোচিত হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, পরীকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, মাহবুবুল আলম হানিফসহ, শীর্ষ নেতারা প্রায় সবাই বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু শরীক নেতাদের মধ্যে রাশেদ খান মেনন বিজয়ী হলেও হাসানুল ইনু পরাজিত হয়েছেন।
বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ও অনিয়মের মধ্যে দিয়ে সারাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে রোববার। এখন পর্যন্ত ২৯৯ তথা সবকটি আসনের ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থীরা ২২৫ আসনে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া ৬২টি আসনে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন ও কল্যাণ পার্টি (ইব্রহিম) ১টি। এছাড়া ৩০০ আসনের মধ্যে ১টি আসনে একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।