নিষিদ্ধ ওষুধ গ্রহণের মাত্রা যেনো বেড়েই চলেছে ভারতের ক্রীড়াজগতে। কোনোক্রমেই লাগাম টানা যাচ্ছেনা তাদের উপর। গেলো এক বছরে পারফরম্যান্স বাড়াতে নিষিদ্ধ ওষুধ সেবন করেছেন এমন ক্রীড়াবিদের সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে তিন গুণের বেশি। বিস্ময়ের ব্যাপার, এই নজরদারির মধ্যে আছেন ভারতের ক্রিকেটাররাও। হার্দিক পান্ডিয়া, সূর্যকুমার যাদব, হারমানপ্রীত কৌর বা স্মৃতি মান্ধানারা মুখোমুখি হয়েছেন ডোপিং টেস্টের।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, দেশটির খেলোয়াড়দের মধ্যে ডোপ করার বা নিষিদ্ধ শক্তিবর্ধক ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে অলিম্পিকের ঠিক আগে অ্যাথলেটিক্স, ভারত্তোলন, কুস্তির মতো খেলায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সম্প্রতি ভারতের ন্যাশনাল অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (নাডা) ২০২২-২০২৩ মওসুমের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতেই বেরিয়ে এসেছে ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের ভয়াবহ তথ্য।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশটির ১৪২ জন খেলোয়াড় ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ তার আগের ১২ মাসে ব্যর্থ ভারতীয় খেলোয়াড়ের সংখ্যা ছিল ৩৯। অর্থাৎ, এক বছরে ডোপ কেলেঙ্কারিতে জড়ানো ভারতীয় খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে তিন গুণের বেশি। এই সময় মোট ৪ হাজার ৩৪২ জন খেলোয়াড়ের ডোপ পরীক্ষা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা চলার সময় পরীক্ষা হয়েছে ২হাজার ৫৯৬ জনের। অন্য সময় পরীক্ষা হয়েছে ১ হাজার ৭৪৬ জনের।
নাডার এই নজর থেকে বাদ পড়েননি ক্রিকেটারেরাও। ২০২২-২৩ মওসুমে মোট ২৭ জন ক্রিকেটারের ডোপ পরীক্ষা হয়েছে। সূর্যকুমার যাদব, ঋষভ পান্থ, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, শ্রেয়াশ আয়ার, ইশান কিষাণ, হারমানপ্রীত কৌর এবং স্মৃতি মান্ধানারা ছিলেন সেই তালিকায়।
তবে সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থা অ্যাথলেটিক্সে। ডোপ টেস্টে ব্যর্থ খেলোয়াড়দের মধ্যে সংখ্যায় সব থেকে বেশি তারাই। মোট ৪৯ জন অ্যাথলেটের শরীরে নিষিদ্ধ পদার্থ পাওয়া গিয়েছে। ২২ জন ভারত্তোলক, ১৭ জন কুস্তিগির এবং ১৩ জন পাওয়ার লিফটার ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। ৮০ জন খেলোয়াড়ের শরীরে পাওয়া গিয়েছে পারফরম্যান্স বর্ধক ওষুধ ব্যবহারের প্রমাণ।
২০২৪ সালে রয়েছে প্যারিস অলিম্পিক্স। এই সময়ে এসে খেলোয়াড়দের মধ্যে ডোপ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া উদ্বিগ্ন নাডা কর্তৃপক্ষ। অলিম্পিক্সের মঞ্চে দেশের মান বাঁচাতে এরি মাঝে কড়া মনোভাবের ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। প্যারিসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন সব খেলোয়াড়ের পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছে ভারতের ন্যাশনাল অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি।
আগামী জুন মাসের মধ্যে সম্ভাব্য সকলের অন্তত তিন বার পরীক্ষার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অ্যাথলেটিক্স, কুস্তি, ভারত্তোলন ছাড়াও নাডার নজরে রয়েছেন হকি, বক্সিং, শুটিং, ব্যাডমিন্টন, তীরন্দাজ এবং টেনিস খেলোয়াড়েরা। এমনকি ক্রিকেটারদের ওপরেও ডোপিং টেস্ট চলতে পারে এসময়।
ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি বা ওয়াডার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ ভারতের স্থান ছিল দ্বিতীয়। রাশিয়ার পর এ দেশের সব থেকে বেশি খেলোয়াড় ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলেন।