ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মিরে অস্থিতিশীলতা চলছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে বেশ নিয়মিতই। এই পরিস্থিতিতে কাশ্মিরের পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে।
এছাড়া ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের চলমান পরিস্থিতিও সেনাবাহিনীর উদ্বেগ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
আগামী ১৫ জানুয়ারি (সোমবার) ভারতের সেনা দিবস পালিত হবে। তার আগে বৃহস্পতিবার বার্ষিক সাংবাদিক সম্মেলন করেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে। সেখানে, জম্মু-কাশ্মিরে নতুন জায়গায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা বৃদ্ধি এবং মণিপুরের পরিস্থিতিসহ ভারতের নিরাপত্তাগত হুমকি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
কাশ্মিরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে জেনারেল মনোজ পান্ডে বলেন, ‘গত ৫-৬ মাসে উপত্যকার রাজৌরি এবং পুঞ্চ সেক্টরের পরিস্থিতি এবং সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কর্মকাণ্ড আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে ২০২৩ সালের আগে ওই এলাকায় সন্ত্রাসবাদকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত এই জায়গাগুলোতে শান্তি বজায় ছিল। কিন্তু এখন, কাশ্মির উপত্যকায় পরিস্থিতি যত স্বাভাবিক হচ্ছে, আমাদের শত্রুরা এই তুলনামূলক শান্ত জায়গাগুলোতে সক্রিয় হচ্ছে। গত তিন বছরে, শুধুমাত্র এই অঞ্চলে ৪৫ জনের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হত্যা করা হয়েছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, এই ছায়া যুদ্ধ কতটা বেড়েছে।
তার দাবি, গত বছর এখানে পাঁচবার অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। তাদের সেই প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছে সেনাবাহিনী। এই পাঁচ ক্ষেত্রে ছয় ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করা হয়েছে। এমনকি পশ্চিম কাশ্মিরেও প্রায় ১৪ ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করা হয়েছে।’
জেনারেল পান্ডে রাজৌরির পরিস্থিতির উন্নতির জন্য নয়-দফা কর্ম পরিকল্পনাও সামনে এনেছেন। এর মধ্যে বর্ধিত পরিসরে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং পুলিশ ও স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও ভালো সমন্বয়ের বিষয়টিও রয়েছে।
তার নয়-দফা কর্ম পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করার বিষয়টিতে জোর দেওয়া।
অন্যদিকে, ভারত-মিয়ানমার সীমান্তেও অশান্তি বাড়ছে। সীমান্তবর্তী রাজ্য মণিপুরে এমনিই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থতির অবস্থা ভালো নয়। সেই পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার সংঘর্ষ।
জেনারেল পান্ডে জানিয়েছেন, ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতিও সেনাবাহিনীর উদ্বেগ বাড়িয়েছে। গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের সেনা এবং সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সংঘর্ষে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়েছেন। দেশটির সেনাদের অনেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতেও আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, শুধু মিয়ানমারের সেনাই নয়, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সদস্যরাও সীমান্ত পেরিয়ে মণিপুরে ঢুকে পড়ছে। মণিপুরের পরিস্থিতি এমনিতেই খারাপ। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে দলে দলে মানুষ আসায়, চাপ বেড়েছে প্রশাসনের।