পঞ্চমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হসিনা। দেশে কারোর পাঁচ বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া যেমন অভূতপূর্ব, তেমনি টানা চারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া, কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনও এ দেশের ইতিহাসে প্রথম। এবারের মন্ত্রিসভা থেকে প্রভাবশালী অনেক রাজনীতিকের বিদায়ের বিষয়টি আলোচনায় এলেও বিতর্কিত ও সমালোচিত মন্ত্রীরা বাদপড়ায় এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও মেধাসম্পন্ন নতুন মুখের আগমন ঘটায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদের এই মন্ত্রিসভা নিয়ে জনমনে অনেক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে বিবেচনা করেই মন্ত্রিপরিষদ সাজিয়েছেন। গেল তিন দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এবারই সবচেয়ে ছোটো মন্ত্রিসভা ঘোষণা করে তিনি নতুন চমক সৃষ্টি করেছেন। ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট এবারের মন্ত্রিসভাতে প্রথম মন্ত্রী হলেন ১৯ জন। প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়েই মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন কয়েকজন। বলা যেতে পারে মন্ত্রিসভার এমন চমককে মানুষ একটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবেই নিয়েছে।
চৌকস ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত মন্ত্রিসভা নিয়ে নতুন আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা চলমান রয়েছে, সেটিকে কাটিয়ে উঠে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা-ই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি নতুন প্রকল্পগুলোর বিষয়েও নতুন সরকারকে অবশ্যই আরও সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কেননা, উন্নয়নের সঙ্গে সব সময়ই বৃহত্তর জনস্বার্থের প্রশ্নটিও যুক্ত থাকে। ফলে দেশজুড়ে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্থানীয় এবং জাতীয় উভয় স্বার্থের বিষয়েই সচেতন থাকতে হবে সরকারকে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ভাষ্যে উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। দেশবাসীও উন্নয়নের সুফল পেতে চায়। এ অবস্থায় জনবান্ধব উন্নয়ন কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়াই সরকারের মুখ্য আলোচ্যসূচি হওয়া উচিত।
নতুন মন্ত্রিসভাকে শুরুতেই আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, সেটা দুর্নীতি রোধ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। সর্বগ্রাসী দুর্নীতি রোধ করতে না পারলে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল জনগণ ভোগ করতে পারবে না। পাশাপাশি বিচার বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বহুল প্রত্যাশিত সেবামূলক ভূমিকা বাস্তবে অধরাই থেকে গেলে দেশের মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হতে পারে। নতুন মন্ত্রিসভায় দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা ও অভিজ্ঞ সদস্যের প্রাধান্যের কারণেও মানুষের এমন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে যে, এই নতুন মুখের মন্ত্রিরা প্রথাগত রাজনীতির কালিমা দূর করে একটি সৎ ও দক্ষ প্রশাসনের নেতৃত্ব দেবেন, দেশের মানুষের জন্য সুশাসন নিশ্চিত করবেন।
জনগণের প্রত্যাশার বিপুল চাপ মন্ত্রিসভাকে নিতে হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একইসঙ্গে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা, গণপরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং কৃষি খাতসহ জনগণের প্রাত্যহিক সেবামূলক খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে এ সব খাতের দৃশ্যমান উন্নতি ছাড়া জনআস্থা অর্জন করাটা কঠিন হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অভিজ্ঞদের এই মন্ত্রিসভা দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে দেশকে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে দিতে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন এবং সফল হবেন এটাই প্রত্যাশা। মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।