স্বচ্ছ রাজনীতির প্রতিদান পেলেন মোকতাদির চৌধুরী

হাসান শান্তনু

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা। ছাত্রলীগের ডাকসাইটে নেতা। পাকিস্তানিদের শোষণের বিরুদ্ধে ও বাঙালির অধিকারের পক্ষে তখন থেকেই তিনি উচ্চকণ্ঠ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে অংশ নেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে অপ্রতিরোধ্য ও সাহসী প্রতিরোধ যোদ্ধার ভূমিকা পালন করেন। কারাবরণ করেন, তবু্ও বঙ্গবন্ধুর ঘাতক সরকারের সঙ্গে আপস করেননি। মোকতাদির সরকারি চাকরিও করেন। একপর্যায়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে দেশ ও মানুষের জন্য আসেন রাজনীতিতে। তিনি আপাদমস্তক শুধুই এক রাজনীতিবিদ। ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিক নন।

রাজনীতিতে এসে মোকতাদির চৌধুরী জনতার ভালোবাসায় হয়ে ওঠেন নন্দিত। বিপুল ভোটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর, বিজয়নগর) সংসদীয় আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আধুনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উন্নয়নের রূপকার তিনি। তিতাস জনপদের রাজনৈতিক উন্নয়নের কবি তিনি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সদ্য গঠিত সরকারের মন্ত্রিসভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শপথ নেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আপাদমস্তক অনুসারী মোকতাদির। তিনি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনৈতিক নেতা। সততা, অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শের ধারক। মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব দিয়ে তাঁর সেই রাজনৈতিক সততা, স্বচ্ছতার প্রতিদান দিলেন বঙ্গবন্ধুর তনয়া, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পাওয়ার খবর জানার পর মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকতাদির চৌধুরী। স্মরণে রাখি, বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলের নেতৃত্ব দেন মোকতাদির। ওই বছরের ৪ নভেম্বর ঢাকার রাজপথে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন তিনি। সেজন্য ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দুই বছর কারাবরণ করেন। ‘৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচন-পূর্ব ইশতেহারে ছিলো দেশের সব মানুষের জন্য আবাসন নিশ্চিত করা। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আবাসন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজটিই প্রধানত করে থাকে। প্রধানমন্ত্রী সেজন্যই তাঁর আস্থাভাজন মোকতাদির চৌধুরীকেই এবার এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। শেখ হাসিনার সরকার মনে করে ‘সবার জন্য আবাসন, দেশে কেউ থাকবে না গৃহহীন।’ তাঁর সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। দেশের বিত্তবান, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, এমনকি যাদের কোনো কিছু নেই অর্থাৎ যারা ভাসমান বস্তিবাসী, তাদের জন্যও সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করছে। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের। এদিক বিবেচনায় এ মন্ত্রণালয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরী তাঁর প্রজ্ঞা, কর্মনিষ্ঠা, সততায় এ মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজাবেন। সংস্কারের মধ্য দিয়ে মন্ত্রণালয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করবেন। উন্নয়নের পাশাপাশি উন্নয়নের গুণগত মানকেও প্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁর কাছে দেশের নাগরিকদের এমন প্রত্যাশা মোটেও অত্যুক্তির কিছু নয়।

মোকতাদির নবম সংসদে ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। দশম সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান। একাদশ সংসদে ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। সবখানেই তিনি সফলতার সঙ্গে ও বিতর্ক মুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করেন।

শেয়ার করুন