‘প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল’

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে একটি মামলার রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদনের রায়ের পূর্ণাঙ্গ পাঠে বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নুরুদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) এ পর্যবেক্ষণ দেন।

ফখরুলের জামিন প্রশ্নে রুল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া আট পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমতুল্য।

হাইকোর্ট বলেন, আবেদনকারী (ফখরুল) ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী বা তার কোনো ভূমিকা ছিল কি না, তা সুষ্ঠু তদন্তের পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তবে এ পর্যায়ে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হলে তা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অনুকূল হবে না।

রায়ে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি প্রজাতন্ত্রের তিনটি অঙ্গের একটির প্রধান। তাই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে আমরা মনে করি।

ঘটনা পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত আবেদনকারী (মির্জা ফখরুল) দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করছেন, যাকে তিনি জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলন দাবি করে আসছেন। দুর্ভাগ্যবশত, বিগত কয়েক মাসে দেখা গেছে যে কথিত ওই ভোটাধিকারের দাবি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে যুক্ত হয়েছে। যাতে প্রাণহানি, অগ্নিসংযোগ, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনকারী সরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহন, পুলিশের গাড়িতে হামলার মতো ঘটনা রয়েছে।

আদালত বলেছেন, কথিত আন্দোলনকারীরাই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আমরা এসব অযৌক্তিক ও ধ্বংসাত্মক ঘটনা বিবেচনায় নিয়েছি, যেগুলো দৃশ্যত দেশে আতঙ্ক তৈরি করেছে। বস্তুত দেশ ও দেশের জনগণকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রায়ে আদালত আরও বলেছেন, আবেদনকারী বিপর্যয়কর ও উচ্ছৃঙ্খল এসব ঘটনার পরিকল্পনাকারী বা তার কোনো ভূমিকা ছিল কি না, সে বিষয়ে কেবল সুষ্ঠু তদন্তের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তদন্তের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে এই পর্যায়ে তার মুক্তির জন্য জামিন দেওয়া সহায়ক হবে না বলে আমরা মনে করছি। (মামলায়) কিছু ধারা আছে যা জামিন অযোগ্য। প্রজাতন্ত্র ও জনগণের নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা রুলটি খারিজ করছি।

মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদনে যুক্তি হিসেবে তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। তিনি কোনো অসুস্থতায় ভুগলে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায ঘটে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ১০ জানুয়ারি ফখরুলের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত। ওই আদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

এর আগে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় মির্জা ফখরুলকে জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

রায়ের পর মির্জা ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে কি না, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রুলের ওপর উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে গত বুধবার (১০ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে ওইদিন মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. সগীর হোসেন লিওন। আদালতে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, মো. আসাদুজ্জামান, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, মো. আক্তারুজ্জামান, মনিরুজ্জামান আসাদ, মো. মাকমুদ উল্লাহ প্রমুখ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বি এম আব্দুর রাফেল। আদালতে মির্জা ফখরুল ইসলামের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম ও মেয়ে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুলকে কেন জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এরও আগে গত ৩ ডিসেম্বর এই মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন ফখরুল।

গত ২২ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। গ্রেফতারের পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। তাকে গত ২৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ ডাকে বিএনপি। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। ওইদিন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর চালায়। বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। পরদিন ২৯ অক্টোবর হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। এরপর থেকে দফায় দফায় অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি দেয় বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা।

শেয়ার করুন