পাকিস্তান–ইরান সংঘাত অর্থনীতিতে যে প্রভাব ফেলতে পারে

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা পাকিস্তানের খুঁড়িয়ে চলা অর্থনীতিকে রীতিমতো ঝাঁকি দিয়েছে। দেশটির শেয়ারবাজার এর ফলে পড়ে গেছে, আর বড় ধাক্কা খেয়েছে ডলার বন্ড।

রয়টার্স জানিয়েছে, বালুচ বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে আজ বৃহস্পতিবার ইরানের ভেতরে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। দুই দিন আগে তেহরান জানিয়েছিল যে আরেকটি গোষ্ঠীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে তারা পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালিয়েছে। ইরানের ওই হামলার পর পাকিস্তান তাদের হামলার কথা জানাল।

universel cardiac hospital

তেহরানের সঙ্গে ইসলামাবাদের এই মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা এমন সময় ঘটেছে, যখন পাকিস্তানের অর্থনীতি মারাত্মক সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির অর্থনীতির আকার ৩৫ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু এই অর্থনীতির বড় সমস্যা উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ক্রমেই বেড়ে চলা রাজস্ব ও চলতি হিসাবের বিশাল ঘাটতি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পাকিস্তানকে ৩০০ ডলার ঋণ দিয়েছে। কিন্তু এর জন্য মানতে হচ্ছে কঠিন সব শর্ত। এই ঋণ পাকিস্তানকে গত গ্রীষ্মে খেলাপি হওয়া থেকে রক্ষা করেছে।

ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালানো হয়েছে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এমন কথা জানানোর পর দেশটির ছাড়া আন্তর্জাতিক বন্ডের মূল্যপতন ঘটেছে। যেসব বন্ডের দাম সবচেয়ে বেশি কমেছে, তার মধ্যে রয়েছে ২০২৬ বন্ড হিসেবে পরিচিত একটি বন্ড। দিনের শুরুতে পাকিস্তানের মূল শেয়ার সূচক ১ দশমিক ৬ শতাংশ পড়ে যায়। পরের দিকে সূচক অবশ্য খানিকটা বাড়ে।

ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের খুব বড় ধরনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে সেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের সর্ব পশ্চিমের প্রদেশ হলো বালুচিস্তান। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য পাঠাতে পাকিস্তানকে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়, বিশেষ করে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ।

পাকিস্তানের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ আসে ইরান থেকে। আর অনানুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশের মধ্যে অনেক পণ্যের লেনদেন হয়। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও ইরানের ডিজেল।

গত বছর জুন মাসে পাকিস্তান একটি বিশেষ আদেশের মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য চালু করে। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসসহ বেশ কয়েকটি পণ্য সীমান্ত বাণিজ্যে লেনদেন হয়। একই ধরনের বাণিজ্যব্যবস্থা আফগানিস্তান ও রাশিয়ার সঙ্গেও চালু করেছে পাকিস্তান।

ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগের চেয়ার আনীল সালমান রয়টার্সকে বলেন, দুই দেশের মধ্যে যে ২০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়, তা দেশ দুটোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বালুচিস্তানের মতো এলাকার জন্য। এই এলাকার মানুষ ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। বিশেষ করে কৃষিপণ্য ও পেট্রোকেমিক্যালের জন্য।

আনীল সালমান আরও বলেন, বাণিজ্যে যে কোনো ধরনের বাধা পড়লে তার অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া থাকবে। পাকিস্তানে পণ্যের ঘাটতি হবে। আর দুই দেশের মধ্যকার ২০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যও কমে যাবে।

পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি পরিচিত পিস পাইপলাইন বা শান্তির পাইপলাইন হিসেবে। আনীল সালমান মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে সংঘাত দীর্ঘমেয়াদি এই প্রকল্পে বড় রকমের প্রভাব রাখবে।

এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ইরান থেকে পাকিস্তানে গ্যাস পরিবহন করার কথা। পাইপলাইনটি ব্যবহার করে ভারতে গ্যাস যাবে, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। এর বাস্তবায়ন এরই মধ্যে পিছিয়ে গেছে। সংঘাতের কারণে এই প্রকল্প আরও পিছিয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে এর জন্য বিনিয়োগ পাওয়া আরও কঠিন হতে পারে।

দেশ দুটি ২০২৩ সালের আগস্টে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি বাণিজ্য চুক্তি করে। তাদের লক্ষ্য দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা।

টেলিমারের ইকুইটি গবেষণা বিভাগের প্রধান হাসনাইন মালিক রয়টার্সকে বলেন, বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে এই সংঘাত বাড়বে না। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে সর্বশেষ এ ঘটনা এমন সময় ঘটেছে, যখন পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন