এবার ডুবো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থার পরীক্ষা চালানোর দাবি করেছে উত্তর কোরিয়া। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ এ তথ্য জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের যৌথ সামরিক মহড়ার প্রতিক্রিয়ায় এই অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে কিম জং উনের দেশ।
তবে উত্তর কোরিয়া ঠিক কবে এই অস্ত্র ব্যবস্থার পরীক্ষা চালিয়েছে, তা উল্লেখ করেনি। তবে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের শত্রুতাপূর্ণ সামরিক তৎপরতার জবাবে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী পারমাণবিক অস্ত্রকে ভিত্তি করে পানির নিচে কাজ করে এমন সমরাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে কেসিএনএ জানায়, ওয়াশিংটন, সিউল ও টোকিওর যৌথ মহড়া উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখছে কিম জং উন প্রশাসন। আর ওই মহড়ার জবাব দিতেই পিয়ংইয়ং পূর্ব কোরীয় সাগরে পানির নিচে হেইল-৫-২৩ নামের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চালিয়েছে।
২০২৩ সালের মার্চে প্রথম নতুন ড্রোন ব্যবস্থাটির পরীক্ষা চালানো হয়। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলেছে যে, পানিতে থাকা শত্রুর ওপর লুকিয়ে আক্রমণ করা ও ডুবো বিস্ফোরণের মাধ্যমে বড় তেজস্ক্রিয় তরঙ্গ তৈরি করে নৌদল ও প্রধান আভিযানিক বন্দরগুলোকে ধ্বংস করার লক্ষ্যেই এটি তৈরি।
গত বছরের শুরুতে পিয়ংইয়ং জানিয়েছিল, দেশটি পানির নিচ দিয়ে পারমাণবিক আক্রমণ করতে পারে এমন ড্রোনের বেশ কয়েকটি পরীক্ষা চালিয়েছে। এটি হেইলের আলাদা সংস্করণ বলে জানিয়েছিল তারা। কোরিয়ান ভাষায় হেইল শব্দের অর্থ সুনামি। আর এর মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় সুনামি সৃষ্টি করা যায় বলে দাবি করেছিল দেশটি। তবে বিশ্লেষকরা পিয়ংইয়ংয়ের কাছে আসলেই এমন অস্ত্র আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এর আগে চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান যৌথভাবে দক্ষিণ উপকূলের জেজু দ্বীপে সামরিক নৌ মহড়া শুরু করে। রোববার (১৪ জানুয়ারি) উত্তর কোরিয়ার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জবাবে এই মহড়া চালানো হচ্ছে বলে জানায় তারা। এই মহড়ায় তিন দেশের ৯টি যুদ্ধজাহাজ অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস কার্ল ভিনসন।
সম্প্রতি দুই কোরিয়ার সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। উত্তেজনা কমাতে দেশ দুটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়কে অগ্রাহ্য করেছে, সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি তাজা গোলার মহড়া চালিয়েছে উভয় দেশ। গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ঘোষণা দেন দক্ষিণ কোরিয়া হলো তাদের প্রধান শত্রু।
তাছাড়া কয়েকদিন আগে দক্ষিণ কোরিয়াকে যুদ্ধের হুমকিও দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ভূখণ্ডের শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য এক মিলিমিটার ভূমিও লঙ্ঘিত হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা ও পুনঃএকত্রীকরণ সংস্থাগুলোকে বাতিল করেছেন তিনি।
কিম জং উন বলেছেন, পিয়ংইয়ং দুই দেশের ডি ফ্যাক্টো সামুদ্রিক সীমানা স্বীকৃতি দেবে না। তাছাড়া সিউল দখলের বিষয়ে সাংবিধানিক পরিবর্তনের ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রধান শত্রু হিসেবে গণ্য করতে সংবিধান পরিবর্তনেরও আহ্বান জানিয়েছেন কিম জং
সূত্র: এএফপি