র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী একজন চিন্তক, লেখক, সম্পাদক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী—সর্বোপরি একজন বহুরৈখিক মানুষ। তবে নিঃসন্দেহে তাঁর প্রথম পরিচয়, তিনি একজন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, উদার ও মৌলবাদমুক্ত প্রগতিশীল সমাজ গড়ার লক্ষ্যে এবং আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক নতুন প্রজন্ম গড়ার প্রত্যয়ে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
শিক্ষা, কর্ম এবং রাজনৈতিক জীবনে অসাধারণ সফলময় এক জীবনের নাম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তথা সহযোদ্ধা-সতির্থদের কাছে তিনি ‘রবিউল ভাই’ নামে সুপরিচিত। একজন স্বচ্ছ ও সাদা মনের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ইতোমধ্যেই দেশের রাজনীতিতে সুপরিচিত সজ্জন ব্যক্তি তিনি।
ছাত্রাবস্থায় তাঁর রাজনীতি শুরু। প্রথম সাফল্য ১৯৬৯-এ ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। এরপর দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের ওপর ভর করে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং বিজয়ের মধ্য দিয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ। তারপর থেকে ২০২৪-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো জয় লাভ করে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সংসদীয় আসন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) থেকে প্রথম পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদায় অভিষিক্ত। এসবের পেছনে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততাই ছিল তাঁর প্রধান শক্তি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সন্দেহাতীতভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের মানুষের বিশ্বস্ত এক সেনাপতি। তাঁর জনমোহনী শক্তি নিয়ে কারও কিছু বলার নেই। স্বাধীনতার পর এ জনপদে যে কজন নেতার জনপ্রিয়তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবেন না তাদের মধ্যে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী অন্যতম। তাঁকে বাদ দিলে বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতির আঙিনায় কর্মীদের কাছে, এমনকি সাধারণ মানুষের কাছেও রাজনীতির বিশ্বস্ত দ্বিতীয় আর কোনও নেতার নাম কেউ একবাক্যে বলতে পারবে বলে মনে হয় না। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করলেও দেখা যাবে, এই জনপদে মোকতাদির চৌধুরীর মতো বিশ্বাসযোগ্য নেতা আর একজনও নেই। অথচ তাঁর মতো বিশ্বাসযোগ্য, নিবেদিত, জনবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির একজন নেতার অভাব ছিল দীর্ঘদিনের। যিনি কাজের মাধ্যমে ও জনগণকে ভালোবেসে সাধারণ মানুষের মন জয় করে নিতে পারেন, ঘোর সংকটে কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস জোগাতে পারেন, তেমন নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আর একজনও নেই।
রাজনৈতিক দলের গ্রহণযোগ্যতার নেপথ্যে থাকে নেতার প্রতি কর্মী ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। কর্মীর উপর, নিজ জনপদের উপর আঘাত আসলে নেতা এগিয়ে গিয়ে সেই আঘাত বুক পেতে নেবেন। এটা যে নেতা করতে পারবেন সেই নেতাই সাধারণ মানুষের আপনজন হয়ে উঠবেন। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে পেরেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু এই দেশের সাধারণ মানুষের আপনজন হয়ে উঠেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন জাতির পিতা। শাসকের শত অত্যাচারও বঙ্গবন্ধুকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর কাছেও উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমন এক নেতা, যিনি তাঁর কর্মগুণে নিজেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর রাজনৈতিক অভিভাবকের আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। আবার তিনি অন্যদের কাছ থেকেও অভিভাবকত্বের এই মান্যতাটুকু পাচ্ছেন। অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়েও এখন তাঁর সর্বজনগ্রাহ্যতা নজরে পড়ার মতো।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের পরতে পরতে বাগ্মিতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও দলীয় নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। এই মুহূর্তে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য যে কজন নেতা আছেন, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী অবশ্যই তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক এবং সর্বস্তরের জনগণের কাছে বর্তমানে একটাই বিশ্বাসযোগ্য নাম—উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনিই জেলার একমাত্র নেতা, যিনি ব্যারিস্টার আব্দুর রসুল, বিপ্লবী উল্লাস কর দত্ত, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখনদের সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনৈতিক অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তারই হাত ধরে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন তিনি। পরবর্তীসময়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের মানুষের নজর কাড়েন। বরাবরই সব কিছুতে তিনি ছিলেন প্রকৃতই একজন রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান, বলিষ্ঠ, সাহসী এবং নির্ভীক প্রশাসক। তথাপিও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত অমায়িক এবং সজ্জন মানুষ হিসেবে সর্বজনগ্রহণযোগ্য। রাজনৈতিক মহলে সবার কাছে ‘রবিউল ভাই’ নামেই বেশি পরিচিত উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী একজন সমঝদার সংস্কৃতিসেবীও। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার পদচারণা নিয়মিত। রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি সংস্কৃতিকর্মীদের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করে মৃতপ্রায় নিজ জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সঞ্জীবনী সুধায় উজ্জীবিত করতে পেরেছেন।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন প্রথম ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, তার নেপথ্যে ‘জনতার মঞ্চ’-এর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানি না যে, জনতার মঞ্চের অন্যতম নেপথ্য নায়ক ছিলেন উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। যার কারণে পরবর্তীসময়ে তাঁকে কম দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি!
সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চতুর্থ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এই আসনটি দীর্ঘদিন যাবত বিএনপির দূর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। যদিও ২০০৮-এর নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হন, কিন্তু ওই বিজয়ের পেছনে দুটি কারণের কথা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা উল্লেখ করে থাকেন। এক. সারা দেশের আওয়ামী লীগের ভূমিধ্বস বিজয়ের অংশ, দুই. ১৯৯৬ সাল থেকে দীর্ঘদিন যাবত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর উদ্যোগে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে আওয়ামী লীগের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা। তা ছাড়া ২০১০ সাল থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগ এখন স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি সুসংগঠিত। ফলে এই আসনটি এখন আওয়ামী লীগের এমন দূর্গে পরিণত হয়েছে যে, সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী এবং দেশের রাজনীতি-সচেতন মানুষের বিশ্বাস, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এসবের সুবিচার ও যথার্থ মূল্যায়ন পেয়েছেন সদ্য গঠিত মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে।
তাঁর মন্ত্রিত্ব পাওয়ায় মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে অনেকখানি। কেননা তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর জন্য যা করেছেন, তার তুল্যমূল্য আতশী কাচ দিয়ে ইতিহাসের পাতায় খুঁজলেও মিলবে না। শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে এমন কোনও সেক্টর নেই, যেখানে তাঁর উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত নিরাপদ একটি জনপদ উপহার দিয়েছেন তিনি, শুধু এ জন্যে হলেও অনাগত ভবিষ্যতে তিনি ইতিহাসের পাতায় অক্ষয় হয়ে থাকবেন। আর এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন বদলে দেওয়া জনপদের জননায়ক। তাই মানুষের বিশ্বাস, ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী ভালোবেসে তাঁকে যে পরম শ্রদ্ধার আসনে জায়গা দিয়েছেন, সে আসনটি অক্ষয় রাখতে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে স্মার্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া করতে প্রয়োজনীয় সব কিছুই করবেন। কারণ যিনি সাংগঠনিক নেতা, যিনি জনগণের অভিভাবক তিনি যেখানেই যান সেখানেই তাঁর দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবেন। এ কথা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না যে আওয়ামী লীগের কোনও কর্মী কিংবা জেলার যে কোনও সাধারণ মানুষও যদি বিপদে পড়েন তিনি একমাত্র একজন নেতাকেই বিশ্বাস করতে পারেন, আর বিশ্বস্ত সেই মানুষটিই হলেন উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
আজ ২০ জানুয়ারি, বদলে দেওয়া জনপদের জননায়ক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর জন্মদিন। জননায়ককে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। তাঁর সুস্থ, সুন্দর দীর্ঘ জীবন এবং তাঁর ভবিষ্যতের সমস্ত প্রচেষ্টায় সাফল্য কামনা করছি।
লেখক : সম্পাদক—প্লাটফর্ম ও সাংস্কৃতিক সংগঠক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।