আইসিজের আদেশের পর ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ছে

মত ও পথ ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলি হামলা। ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) আদেশের পর গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঠেকানো এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা নিয়ে নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে ইসরায়েল। গতকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক আদালত যে আদেশ দিয়েছেন, তাতে সবার দৃষ্টি এখন ইসরায়েলের দিকে– তারা এ আদেশ মানে কী না। এ আদেশের পর ইহুদিবাদী দেশটির প্রধান সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রও চাপে পড়েছে। গণহত্যার লাগাম টানতে বাইডেন প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আইসিজের আদেশ ইসরায়েল ‘যথাযথভাবে মানবে’ বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। তবে আদেশের পরদিনই আজ শনিবার গাজায় বোমা হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। একদিনে আরও ১৭৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩১০ জন। পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে বেসামরিক লোকজনকে। সিএনএন এমন একটি ভিডিও প্রকাশ করায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

universel cardiac hospital

ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ‘জরুরি মৌলিক সেবা’ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে বলে আইসিজে আদেশ দিলেও যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিছু বলেননি। আদেশের পর গণহত্যার মামলাকারী দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সেরিল রামাফোসা বলেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো তাদের অপরাধ উন্মোচন হলো।

দ্য গার্ডিয়ান জানায়, আন্তর্জাতিক আদালতের আদেশকে স্বাগত জানিয়ে জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্ক তা মানতে ইসরায়েলকে তাগিদ দিয়েছে। এর আগে আইসিজে ইউক্রেনে আগ্রাসন না চালানোর জন্য রাশিয়াকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তা অমান্য করেন।

সম্প্রতি এক বক্তব্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, কেউ তাদের থামাতে পারবে না, এমনকি দ্য হেগও নয়। আদালতের রায়ের পর গাজায় স্থল অভিযানে কোনো পরিবর্তন আসবে কী না– এ নিয়ে তিনি মন্তব্য করেননি। আইসিজের আদেশে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো মন্তব্য না থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র মামলাটিকে ‘গুরুত্বহীন’ বলে বর্ণনা করেছে। তারা বলছে, আদালত আদেশে গণহত্যা তদন্তের কথা বলেননি বা যুদ্ধবিরতি নিয়েও কিছু বলেননি। আর যুক্তরাজ্য বলছে, গাজায় ইসরায়েল কোনো গণহত্যা চালায়নি।

আইসিজের বিচারক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জোয়ান দোনোগ আদেশটি পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ইসরায়েলের পাল্টা হামলা গাজায় বেসামরিক মানুষকে ‘চরম অরক্ষিত’ অবস্থায় ফেলেছে। লাখো মানুষ হতাহত হয়েছেন; বাড়িঘর, স্কুল, চিকিৎসাকেন্দ্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

আলজাজিরা জানায়, খান ইউনিসের আল-আমল হাসপাতালকে লক্ষ্যে পরিণত করায় ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। টানা ছয়দিন হাসপাতালটি ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনের ন্যাশনাল কাউন্সিল বলছে, ইসরায়েল গাজার সীমান্তে যে বাফার জোন তৈরি করতে চাচ্ছে, তা করা হলে গাজার আয়তন অন্তত ২০ শতাংশ কমে যাবে।

এদিকে ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ ও সহযোগিতা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর বিরুদ্ধে ৭ অক্টোবরের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ওই সংস্থাটিতে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ। এ অভিযোগে শুক্রবার ইউএনআরডব্লিউএর সাত সদস্যকে বরখাস্ত করে জাতিসংঘ। এর জেরে প্রথমে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক ঘোষণায় বলে, তারা সাময়িকভাবে তহবিল সরবরাহ বন্ধ রাখবে।

আজ শনিবার সিএনএন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। রোমহর্ষক ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট্ট নাতিকে নিয়ে নানি একদল বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির সঙ্গে অন্যত্র যাচ্ছিলেন। নাতি হাত ধরে যাচ্ছিল নানির। তাকে বেশ উচ্ছল দেখাচ্ছিল। কিন্তু কে জানত কিছুক্ষণ পরই তার জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহতা! হঠাৎ গুলির শব্দ। সঙ্গে সঙ্গে নানি লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। ছোট্ট নাতি কী করবে বুঝতে না পেরে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে।

শেয়ার করুন