বারবার নতুন নতুন দলের সাথে জোট গড়ে ভারতের রাজনীতিতে ‘‘পল্টু কুমার’’ নামে পরিচিতি পাওয়া বিহারের নেতা নীতীশ কুমার রেকর্ড নবমবারের মতো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নিয়েছেন। ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনীতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাথে জোট গড়ে রোববার বিহারের নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, বিজেপির সাথে অংশীদারত্ব গড়ে বিহারের নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে নবমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নিয়েছেন ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্ল্যাটফর্ম ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম নেতা নীতীশ কুমার। মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেওয়ার আগে বিরোধীদের এই জোট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন তিনি।
নীতীশের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিজেপি নেতা সম্রাট চৌধুরী, বিজয় সিনহা এবং অন্যান্যরা। এনডিটিভি লিখেছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন হওয়ার জন্য গত এক দশকে পাঁচবারের মতো রাজনৈতিক শিবির পাল্টেছেন নীতীশ। রাজনীতিতে এই ডিগবাজির কারণে ভারতে তিনি ‘‘পল্টু কুমার’’ নামেও পরিচিত।
নীতীশ কুমার ২০২২ সালে সর্বশেষ বিজেপির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। গত কয়েকদিন ধরেই জল্পনা ছিল, আবার জোট বদল করতে পারেন বিহারের রাজনৈতিক দল জেডিইউর নেতা নীতীশ। ওই বছর তিনি যে এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন এবং আরজেডি-কংগ্রেসসহ ১৯টি দলের সঙ্গে ‘‘মহাগঠবন্ধন’’ জোট তৈরি করেছিলেন, দেড় বছর কাটতে না কাটতেই আবার সেই জোট ভেঙে এনডিএ-তে ফিরে যাবেন। সেই জল্পনা সত্যি করেই রোববার রাজ্যপালের কাছে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন নীতীশ।
লোকসভা নির্বাচনের আগে নীতীশের এই পক্ষ-বদল বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার কাছে বড় ধাক্কা। ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম মুখ ছিলেন নীতীশ কুমার। জোটের সূত্র বেঁধেছিলেন তিনিই। আসন ভাগাভাগি নিয়ে যখন জোটের ভেতরে ফাটল চওড়া হচ্ছে, সেই সময়ই লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে জোটই বদলে ফেললেন নীতীশ কুমার।
ইন্ডিয়া জোটের প্রথম কর্ণধার ছিলেন তিনিই। তাদের এই জোটের লক্ষ্য ছিল বিজেপিকে হারানো। কিন্তু সেই নীতীশই আবার বিজেপির সঙ্গে হাত মেলান। এই প্রসঙ্গে বিহারের এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি একটা জোট তৈরি করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দেখলাম, কেউই কিছু করছে না।’’
নতুন সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নীতীশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তিনি বলেন, রাজ্যের উন্নয়ন ও মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষা মেটাতে নতুন এনডিএ সরকার চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখবে না। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং দুই উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী ও বিজয় সিনহাকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমার আশা, এই নতুন সরকার একাগ্রতার সঙ্গে রাজ্যবাসীর সেবা করে যাবে।’
আগামী বছর রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন। তত দিন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবেই নীতীশ মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন বলে বিজেপি তাকে আশ্বাস দিয়েছে। তার আগে রয়েছে লোকসভার ভোট। ২০১৯ সালে নীতীশকে পাশে নিয়েই এনডিএ রাজ্যের ৪০টির মধ্যে ৩৯টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। এবারও নীতীশকে সেই লক্ষ্যেই কাছে টেনেছে তারা।
তবে বারবার এভাবে শিবির বদলের জন্য নীতীশের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে তার উদ্দেশে বলেছেন, ভারতের রাজনীতিতে কিছু ‘আয়া রাম গয়া রাম’ এখনো টিকে আছে। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, রংবদলের ক্ষেত্রে নীতীশ কুমার গিরগিটিকেও লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন।