জর্ডানে ড্রোন হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের তিন সেনা নিহত হয়েছেন। হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৪০ জনেরও বেশি। দেশটির সিরিয়া সীমান্তবর্তী একটি সামরিক ঘাঁটিতে হওয়া এই ড্রোন হামলা ও হতাহতের জেরে সামনে আসছে যুদ্ধের শঙ্কা।
তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চাইছে না যুক্তরাষ্ট্র। যদিও যুক্তরাষ্ট্র তার সৈন্যদের রক্ষা করার জন্য ‘সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীর জর্ডানে প্রাণঘাতী ড্রোন হামলার পরে যুক্তরাষ্ট্র তার সৈন্যদের রক্ষা করার জন্য ‘সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ নেবে বলে সোমবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। যদিও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন জোর দিয়ে বলছে, তারা ইরানের সাথে যুদ্ধ চাইছে না।
গত রোববারের ওই হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত এবং ৪০ জনেরও বেশি সেনা আহত হয়। গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটিই ছিল মার্কিন সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রাণঘাতী কোনও হামলা। এছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং গাজায় ইসরায়েলের বিধ্বংসী প্রতিশোধমূলক হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল, এই হামলা সেই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
হামলার পরদিন সোমবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, ‘জর্ডানে তিন সাহসী মার্কিন সেনার মৃত্যু এবং আহত অন্যান্য সৈন্যদের জন্য আমার ক্ষোভ এবং দুঃখ দিয়ে (কথা) শুরু করা যাক।’
পেন্টাগনে ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গের সাথে বৈঠকের শুরুতে অস্টিন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট (জো বাইডেন) ও আমি মার্কিন বাহিনীর ওপর কোনও ধরনের হামলা সহ্য করব না এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের সৈন্যদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেব।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেমন গতকাল বলেছেন, আমরা (হামলার) প্রতিক্রিয়া জানাব এবং সেই প্রতিক্রিয়া বহু-স্তরীয় হতে পারে, পর্যায়ক্রমে আসতে পারে এবং সময়ের সাথে সাথে চলতে পারে।’
তবে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতি আরও বাড়াতে চান না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানও যুদ্ধ চায় না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে পেন্টাগন।
পেন্টাগনের মুখপাত্র সাবরিনা সিং সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অবশ্যই যুদ্ধ চাই না এবং সত্যি বলতে আমরা দেখতে পাচ্ছি না যে, ইরানও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ করতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, পেন্টাগন বিশ্বাস করে ইরান নিজেও যুদ্ধ চায় না।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তার মুখপাত্র জন কিরবি বলছেন, ‘আমরা সামরিক উপায়ে (ইরানের সরকারের) সাথে সংঘাত চাইছি না।’
তিনি আরও বলেন, হামলার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সেসব বিকল্প নিয়ে কাজ করছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
রয়টার্স বলছে, গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান বাহিনীকে ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান এবং ইয়েমেনের উপকূল থেকে ইরান-সমর্থিত বাহিনী ১৬০ বারেরও বেশিবার আক্রমণ করেছে।
তবে সিরিয়ার সাথে জর্ডানের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের কাছে টাওয়ার ২২ নামে পরিচিত একটি দূরবর্তী চৌকিতে রোববারের হামলার আগ পর্যন্ত আগের কোনো হামলাতেই মার্কিন সৈন্য নিহত বা এত বেশি সংখ্যক সেনা আহত হয়নি। হামলার শিকার এই ঘাঁটিতে প্রায় ৩৫০ মার্কিন সেনা ছিলেন।
রোববারের হামলার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার প্রতিক্রিয়া জানাবে। তবে এ বিষয়ে আর বিশদ কোনো বিবরণ তিনি দেননি।