বিগত একাদশ জাতীয় সংসদের মতো চলতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো গঠনের কাজ প্রথম অধিবেশনেই শেষ করতে চান সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য এরই মধ্যে কমিটির খসড়া তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাব সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন করা হবে। কমিটিগুলোর সভাপতি পদে এবারও সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের প্রধান্য থাকছে।
তবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দলের সংসদ সদস্যদের জন্য চারটি সভাপতি পদের দাবি করা হলেও তারা দুটি সভাপতি পদ পেতে পারে। এর বাইরে স্বতন্ত্রদের থেকে তিন থেকে চারজন সভাপতি হতে পারেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দ্রুততার সঙ্গে সংসদ নেতা ও উপনেতা নির্বাচন এবং চিফ হুইপ ও পাঁচজন হুইপ নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা নিয়োগের প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে।
৩০ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন এবং তাঁদের শপথগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এখন সবার দৃষ্টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠনের দিকে। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সংসদীয় কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছিল।
যদিও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিসহ নানা কারণে কমিটিগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল।
এর পরও একাদশ জাতীয় সংসদে ৫০টি সংসদীয় কমিটি কাজ করেছে। এর মধ্যে ১১টি সংবিধান ও সংসদ সম্পর্কিত এবং ৩৯টি মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি। এদিকে দ্বাদশ জতীয় সংসদের জন্য সমসংখ্যক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সংসদ নেতার নির্দেশনা অনুযায়ী, চিফ হুইপ কমিটি গঠনের প্রস্তাব স্পিকারের মাধ্যমে সংসদে উত্থাপন করবেন এবং কণ্ঠ ভোটে সেই প্রস্তাব পাস হবে।
একাধিক সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিগুলোর প্রতি সবার আগ্রহ বেশি।
কারণ কমিটিগুলোর সভাপতিরা অনেকটা ছায়ামন্ত্রীর মতোই দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের মন্ত্রণালয়ের কাজের তদারকি করার অধিকার রয়েছে। ফলে মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি কারা হচ্ছেন এবং কোন কমিটিতে কে আসছেন, তা নিয়ে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। শুধু সভাপতি পদ নয়, কমিটির সদস্য হওয়ার জন্যও অনেক সংসদ সদস্যের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি সংসদেও সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী এবং একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদীয় কমিটির সভাপতি হতে তৎপরতা শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি অধিবেশনেই সংসদীয় কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে। কমিটির সভাপতি ও সদস্য কারা হবেন, তা সংসদ নেতাই ঠিক করে দেবেন। এরপর তা অনুমোদনের জন্য সংসদে উত্থাপন করা হবে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদে পুরনো ও সদ্যোবিদায়ি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের মধ্য থেকে কেউ কেউ থাকতে পারেন বলে মনে করেন সংসদের হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল।
তিনি বলেন, সরকারি দল ছাড়াও সংসদের ভারসাম্য ও স্বচ্ছতার জন্য বিরোধী দল ও স্বতন্ত্রদের মধ্য থেকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ সংসদ সদস্যদের সভাপতি করা হতে পারে। কারণ সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদটি গুরুত্ব্বপূর্ণ। তাঁরা মন্ত্রণালয়ের আয়-ব্যয় ও নিয়ম-নীতির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখেন। সরকারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেন।
সংসদ সচিবালয়ের তথ্যানুযায়ী, সংসদের স্থায়ী কমিটিতে একজন সভাপতি ছাড়াও ৯ থেকে ১৪ জন সদস্য থাকেন। সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদটিকে সম্মানজনক পদ হিসেবে দেখা হয়। সংসদীয় কমিটির সভাপতিরা সংসদ ভবন এলাকায় একটি অফিস পেয়ে থাকেন। বিরোধীদলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় পার্টিকে চারটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলের সদস্যসংখ্যা মাত্র ১১ হওয়ায় সেই অনুরোধ রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে জাতীয় পার্টি থেকে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সভাপতি পদ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।