জনপ্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা সচিবদের নিয়ে আজ সোমবার প্রথম বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি বর্তমান সরকারের আমলে প্রথম সচিব সভা। রেওয়াজ অনুযায়ী সচিব সভায় প্রধান অতিথি থাকেন প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব এতে সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় এই সভা শুরুর কথা রয়েছে।
সচিব সভা আগে সচিবালয়েই হতো। যেহেতু মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকগুলো এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হচ্ছে, তাই এবার সেখানেই সচিব সভা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকের সভায় নতুন সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে জোর দেবেন। প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার-সংশ্লিষ্ট কাজ বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবকে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশনা দেবেন তিনি।
এর বাইরে আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নকাজ তদারকিতে মনোযোগী হতে বলা হবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে একযোগে ৯০ হাজার ৫৯১ কোটি টাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও ৫ হাজার ৩৬০টি অবকাঠামো প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিগত সরকারের প্রতিশ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেবেন সরকারপ্রধান। সভায় ১৫ থেকে ১৮টি বিষয়ের ওপর আলোচনা হতে পারে।
সারাদেশে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়েও সভায় আলোচনা হবে। এসব ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হবে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সম্পর্কেও সচিবদের ধারণা নেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন সেবা পেতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর করারও নিদের্শনা দেবেন।
তবে আজকের সচিব সভায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের ওপর তিনি জোর দেবেন বলে জানা গেছে। এর বাইরে স্বাস্থ্য, কৃষি ও খাদ্য খাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসতে পারে সভায়। উপজেলা পর্যায় থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর শুরু হবে।
সভায় সচিবরা প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে নিজেদের মতামত ও কাজের বাধাগুলো তুলে ধরবেন। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, আগের সচিব সভার সিদ্ধান্তের অগ্রগতি, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে। দ্রুত বিচার আইনের প্রয়োগ নিয়েও থাকবে বিশেষ নির্দেশনা।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভা হওয়ার কথা ছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ষষ্ঠ সভাটি অনিবার্য কারণে বাতিল হয়। সেই সভার আলোচ্যসূচিতে ৩১টি এজেন্ডা ছিল। এজেন্ডায় থাকা অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামোতে রাজস্ব খাতে স্থায়ীভাবে ক্যাডার পদ সৃষ্টি, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা নিয়োগ বিধিমালা-২০২২ অনুমোদনের বিষয়ও ছিল। এসব আজ আলোচনায় আসবে। স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়ও আলোচনায় উঠতে পারে।
সচিব সভা আয়োজনে যুক্ত এক সচিব জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী যেসব দিকনির্দেশনা দেন, তা বছরজুড়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে মেনে চলেন সচিবরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সচিব বলেন, ‘সচিব সভার নির্ধারিত এজেন্ডা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক বক্তব্যই মূল বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ, সরকারপ্রধান বছরে একবার সচিবদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন। সেখানে বিশেষ দিকনির্দেশনা দেন তিনি।’
আজকের সচিব সভায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও আলোচনা হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ আসতে পারে। বৈঠকে সচিবরা কোনো আবদার করবেন কিনা– এমন প্রশ্নে এক সচিব বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন সুযোগ-সুবিধার দাবি জানানোর সুযোগ নেই। সংকট সফলভাবে মোকাবিলা করে একটা ভালো অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে উত্তরণই সবার মূল টার্গেট।
সাধারণত সচিব সভায় সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বিভিন্ন দপ্তর বা সংস্থায় কাজ করা সচিবরা পদমর্যাদার কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকেন। বর্তমানে নিয়মিত ও চুক্তিভিত্তিক মিলিয়ে ৮৭ জন সচিব ও সিনিয়র সচিব রয়েছেন।