অযৌক্তিকভাবে কোনো ফাইল ধরে রাখবেন না: গণপূর্তমন্ত্রী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

অযৌক্তিকভাবে কোনো ফাইল ধরে না রাখা এবং কোনো কাজে বিলম্ব না করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

মন্ত্রী বলেন, আপনারা তো সেক্রেটারিয়েট নন। আপনাদের ফাইল ধরে রাখার কথা না, তবে আছে। গৃহায়ণ মন্ত্রী হওয়ার আগে আমার এক ব্যাচমেটের পারিবারিক একটা বিষয় নিষ্পত্তির জন্য আমি এখানে এসেছিলাম। এসে ঘোরাঘুরি করেছি। দেখেছি কী কষ্টের জায়গা। যদিও সেটি অনেক আগের কথা। এখন আর যেন সেটি না হয়।

তিনি বলেন, যত্রতত্র ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নির্মাণের ফলে একদিকে কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এজন্য বিভাগ, জেলা ও উপজেলার পাশাপাশি প্রান্তিক জনপদের আবাসন পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব হওয়া প্রয়োজন। মফস্বলে পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত আবাসন নিশ্চিত করতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত করা প্রয়োজন এবং এজন্য যথা শিগগিরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

কর্মক্ষেত্র অকারণে কালক্ষেপন না করে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে বিদ্যমান আইন মেনে যে কোন সিদ্ধান্ত দ্রুততার সাথে গ্রহণের জন্য কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে একটি আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি রচনা করে গিয়েছেন। একটি দরিদ্র রাষ্ট্রকে স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করেছিলেন। তাঁর সময়ে সাড়ে তিন হাজার ব্রিজ কালভার্ট পুনঃনির্মাণ করতে হয়েছে। যা জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া এমনকি জননেত্রী শেখ হাসিনার সময়েও হয়নি।

এসময় তিনি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে সৎভাবে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমি জিয়া-এরশাদের মিলিটারি গভর্নমেন্ট কিংবা বেগম জিয়ার সেমি মিলিটারি গভর্নমেন্ট’র প্রতিনিধিত্ব করি না, শেখ হাসিনার ডেমোক্রেটিক গভর্নমেন্ট’র প্রতিনিধিত্ব করি। শেখ হাসিনা সরকার জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল সরকার। জনগণের স্বার্থ এই সরকারের কাছে এক নম্বরে। জনগণের স্বার্থ নষ্ট হয়, এমন কিছু আমাদের কাছে পছন্দ হবে না। সুতরাং জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য আপনারা যতটা পারেন, আইনের মধ্যে থেকে সাধ্য অনুযায়ী কাজ করবেন আপনারা।

অনুষ্ঠানে জাগৃক সদস্য (ইঞ্জিনিয়ার) মোসলেহ উদ্দিন গ্রিন বিল্ডিং টেকনোলজি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন উচ্চ আমদানি শুল্কের কারণে প্রাকৃতিক পাথরের মূল্য দেশীয় বাজারে অনেক বেশি। অন্যদিকে সিমেন্ট শিল্পের স্বার্থে যেসব পাথর আমদানি করা হয় সেসব পাথরের আমদানি শুল্ক কম হওয়ায় বাজারে এর মূল্য অনেক কম। ফলে বেসরকারি নির্মাণ শিল্পে এসব নিম্নমানের পাথর ব্যবহারের ফলে কম স্থায়িত্বের ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ দিন দিন বাড়ছে। এজন্য গণপূর্তের রেট সিডিউলে রেডিমিক্স কংক্রিট ও পরিবেশবান্ধব ব্লকের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন।

তাছাড়া বর্তমানে দেশীয় অনেক ইলেকট্রনিক সামগ্রী প্রস্তুতকারী সংস্থা লিফটসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্র মেকানিক্যাল সামগ্রী প্রস্তুত করে থাকে। কিন্তু গণপূর্তের রেট সিডিউলে অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারণে সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে এসব পণ্য ক্রয়ের সুযোগ নেই। রেট সিডিউলে এসব দেশীয় পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রত্যুত্তরে মন্ত্রী এসব প্রস্তাবনা লিখিত আকারে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অর্গানোগ্রাম হালনাগাদ করার দাবি উত্থাপন করলে মন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান এনডিসির সভাপতিত্বে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজি ওয়াছি উদ্দিন। অনুষ্ঠানে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন