তিস্তা সংকট ২০২৬ সালের মধ্যে মিটে যাবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে চলমান সংকট ২০২৬ সালের মধ্যে মিটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেছেন, তিস্তা নিয়ে ভারত সরকারের কোনো অসুবিধা নেই। সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের। তবে আলোচনা করেছি, আশা করছি ভারতের জাতীয় নির্বাচনের পর একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারবো। ২০২৬ সালে গঙ্গা চুক্তিও আছে। আশা করছি তার মধ্যেই তিস্তার পানি চুক্তির সমাধান হবে।

ভারতে সফর শেষে দেশে ফেরার আগে শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাস আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াসসহ মিশনের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, তিস্তা চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বাংলাদেশ কোনো কথা বলবে কি না। উত্তরে ড. হাছান বলেন, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিজনেস করতে হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখন কীভাবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করবে সেটি কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়।

বাংলাদেশ অংশে তিস্তার উপরে ব্যারেজ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আলোচনা হয়নি, এটি নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। এটির প্রয়োজন আছে। কিন্তু এ নিয়ে এখনো সেভাবে কথা হয়নি।

দিল্লি সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভারতের সঙ্গে খুব আত্মিক এবং উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যে সম্পর্ক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমরা বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট কীভাবে এ অঞ্চলে প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে কথা হয়েছে। বাংলাদেশেও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড সদস্যদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এগুলোর সমাধানে কিভাবে একযোগে কাজ করা যায় এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কীভাবে ফেরত পাঠানো যায়, সেসব বিষয়েও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা একাধিক ভোগ্যপণ্যের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল। পেঁয়াজ, রসুন, ডালসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। কিন্তু মাঝেমধ্যে ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে আমাদের আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটে। এ বিষয়গুলো নিয়ে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গোয়েলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা এসব ভারতীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটি কোটা নির্ধারণ করতে চাই। আগামী রমজান মাসের আগে পেঁয়াজ এবং চিনি যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করতে পারি সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে আমরা ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি করি। ভারতে রপ্তানি করি দুই বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি মূল্যের পণ্য। এই বাণিজ্য ভারসাম্য যেন কমানো যায় তা নিয়ে কথা হয়েছে।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়েও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোবালের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিয়ানমারের শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ভারতের সাহায্য সবসময় আমরা চেয়েছি। তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে সবসময় ভারতের সহযোগিতা কামনা করেছি। এবারও বিষয়টি সেভাবেই আলোচনা হয়েছে।

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে ছিটমহল সমস্যা ছিল প্রায় ৪০ বছরের বেশি পুরোনো। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা সেটির সমাধান করতে পেরেছি। টাঙ্গাইল শাড়ির সমস্যার সমাধানও হয়ে যাবে।

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ও ভোটের ফলাফল নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের জনগণ কাকে ক্ষমতায় আনবে সেটি সেদেশের জনগণের বিষয়। জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করবে আমরা তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মেই বিজনেস করবো। আমরা পাকিস্তানের গণতন্ত্রকেই স্বাগত জানাই।

শেয়ার করুন