মন্ত্রিত্ব কোনো বড় বিষয় নয়, দেশের জন্য কাজ করাই বড় বিষয়: গণপূর্তমন্ত্রী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, মন্ত্রিত্ব কোনো বড় বিষয় নয়, দেশের জন্য কাজ করা হলো বড় বিষয়। দেশের যখনই সংকট হয়েছে, তখনই এই সংকট মোকাবেলায় যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্যে আমি প্রথম কাতারে থাকার চেষ্টা করেছি। মুক্তিযুদ্ধ বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী অমানিশার অন্ধকার ভেদ করে গণতন্ত্রের জন্য আলোর ছটা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করার জন্য যে লড়াই শুরু হয়েছিল সেখানেও আমি চেষ্টা করেছি সামনের সারিতে থাকার জন্য। যখন স্বৈরতন্ত্র জগদ্দল পাথরের মতো বাংলাদেশের বুকে চেপে বসার চেষ্টা করেছিলো, সেই স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনতার মঞ্চ তৈরি করে আমরা লড়াই করেছিলাম।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পক্ষ থেকে দেওয়া গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং আরও উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার এই পড়ন্ত বয়সে এসে আমার ওপর যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমি জানি-এটি একটি গুরুদায়িত্ব, অনেক কঠিন দায়িত্ব। বাংলাদেশের খুবই জটিল একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে সুনামের সাথে বিদায় নেওয়া খুবই কঠিন একটি বিষয়, আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এখানে আমার অনেক কিছু করার আছে, আমার চেষ্টা থাকবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে একটি আদর্শ মন্ত্রণালয়ে পরিণত করা। আমরা যে যার অবস্থানে থেকে যদি ন্যায়সংগত কাজ করি, তাহলেই দেশ থেকে দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক উজ্জ্বল ঐতিহ্যের লীলাভূমি। নবাব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা, ব্যারিস্টার আব্দুর রসূল, বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত, মনমোহন দত্ত, আফতাব উদ্দিন খাঁ, আল্লামা তাজুল ইসলামসহ অসংখ্য গুণী মানুষের জন্মভূমি এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আমি আজকে আমার পূর্বসূরীদের কথা স্মরণ করছি। ২০০৫ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আমি যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি, সেই থেকে থেকে এখানকার মানুষ অকাতরে আমাকে ভালোবাসা দিয়েছেন এবং সমর্থন দিয়েছেন, যেটির মূল্যায়ন আমার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা করেছেন। তিনি আমাকে ২০০৬, ২০১১, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৩ সালে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, যেজন্য আমি চতুর্থবারের মতো জনপ্রতিনিধি হয়ে আপনাদের খেদমত করার সুযোগ পেয়েছি।

তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা অন্তহীন। কেননা তাদের ভালোবাসাও আমি অন্তহীনভাবে পেয়েছি। এজন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে নিয়ে আমি অনেক ভাবনা করি। আমার কাছে মনে হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যদি শত শত নবাব শামসুল হুদা জন্ম নিতো, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যদি শত শত ব্যারিস্টার আব্দুর রসূল জন্ম নিতো, কতই না ভালো হতো! কিন্তু আমরা অনেক পিছনে গিয়েছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে এগিয়ে নিতে আমি গুণীজনদের পথ অনুসরণ করার চেষ্টা করছি।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, অপরিকল্পিত যে আবাসন এখন চলছে, তা বন্ধ করে দিয়ে পরিকল্পিত আবাসনে যাওয়ার সুযোগ এই মন্ত্রণালয়ে আছে। এই কাজটি করার চেষ্টা আমি করব। ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি প্রাচীন শহর হওয়া সত্বেও এর স্ফীতির কোনো সুযোগ নাই, এটির সম্প্রসারণের জন্য আমি কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পূর্ব প্রান্তরে আমরা একটি পরিকল্পিত উপশহর গড়ে তুলবো। যার নকশার কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে শিশুদের বিনোদনের জন্য কোনো পার্ক নেই, আমি আমার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বলেছি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য, তারা ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি মাল্টি-পারপাস মিলনায়তন নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, সারাদেশেই বহুতল বিশিষ্ট অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করা হবে। এসব অ্যাপার্টমেন্টে প্রবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট সংরক্ষিত থাকবে।

শহরে ইদানীং বেশ কয়েকটি ছিনতাই হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিনতাই-চাঁদাবাজি বন্ধ ছিল। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ছিনতাই হয়েছে। ছিনতাই-চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। এসব অপকর্মের সঙ্গে যদি আওয়ামীলীগ বা অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কেউ জড়িত থাকে অবশ্যই তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।

অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ শামসুদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক ও বাচিক শিল্পী মো. মনির হোসেনের পরিচালনায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন মাউশির প্রাক্তন মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ও ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রেজারার অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন।

বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মাহমুদুল হক ও কাজী শফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রাস্টি বোর্ড ও পিএসসির সদস্য অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অন্যতম সদস্য সৈয়দ এখতেশামুল বারী তানজিল।

অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রাস্টি, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন