সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বেশিরভাগই নতুন মুখ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগের লগো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নতুন মুখ বেশি আসছে। আওয়ামী লীগ তাদের ৪৮টি আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। ক্ষমতাসীন দলটির প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকায় বেশিরভাগই নতুন মুখ। তবে বিগত সংসদের সাত নারী সংসদ সদস্যকে এবারও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেছেন এবং মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, এ রকম অন্তত তিনজন সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী ছিলেন এমন নারীরাও সংসদে আসার টিকিট পেয়েছেন।

গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে এর আগে সকাল ১০টায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় গণভবনে। সেই পর্বে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেন।

এবারের সংসদে নৌকা প্রতীকে জয় পাওয়া ২২৫ সংসদ সদস্যের আনুপাতিক হারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৩৮টি সংরক্ষিত আসন। আর ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত আসনে সদস্য নির্বাচনের ক্ষমতা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেন। সব মিলিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে ৪৮টি আসন পেয়েছে আওয়ামী লীগ।

বাকি দুটি সংরক্ষিত আসন পাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের ৪৮টি সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হতে এবার ১ হাজার ৫৪৯ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। মনোনয়ন ফরমের প্রতিটির মূল্য ছিল ৫০ হাজার টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দেড় হাজারের বেশি আগ্রহীর মধ্য থেকে যাচাই–বাছাই করে প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ঘোষিত তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ আসনে প্রার্থী করার পর হেরে গেছেন, এমন দুজনকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই দুজনের মধ্যে ঢাকা–৪ আসনে সানজিদা খানম ও গাজীপুর–৫ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন মেহের আফরোজ চুমকি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে মেহের আফরোজকে হারিয়ে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা আকতারুজ্জামান।

সানজিদা খানম হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাবেক সহকারী একান্ত সচিব আওলাদ হোসেনের কাছে। সানজিদা খানম আগের সংসদে সরাসরি ভোটে সংসদ সদস্য ছিলেন। এবার এই দুজনই সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়নে সংসদে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল। তাকেও সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুর–৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলেও পরে আসন সমঝোতায় শরিক দল জাসদের প্রার্থীকে ওই আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এখন ফরিদুন্নাহার লাইলী সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়ন পেলেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানকে এবার সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। খুলনা–৩ আসনে মন্নুজান সুফিয়ানের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন ৭ জানুয়ারির ভোটে। সংরক্ষিত আসনে নবম ও দশম জাতীয় সংসদে সদস্য ছিলেন তারানা হালিম। ওই দুটি সংসদের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারে প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন তিনি। দ্বাদশ সংসদে তারানা হালিমকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে একাদশ সংসদে ছিলেন এমন সাতজনকে এবারও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন ওয়াসিকা আয়েশা খান, ফরিদা খানম, অপরাজিতা হক, নাহিদ ইজাহার খান, শবনম জাহান, ফজিলাতুন নেসা ও আরমা দত্ত। এ ছাড়া নবম সংসদের সদস্য সাহিদা তারেখ দীপ্তি এবার মনোনয়ন পেয়েছেন। সাংবাদিকদের মধ্যে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন।

চলচ্চিত্র অভিনেত্রীসহ বিনোদন অঙ্গনের ১৫ জনের বেশি নারী এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। এ নিয়ে বেশ আলোচনা হলেও বিনোদন অঙ্গনের কাউকেই এবার মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ।

নতুন যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, তারা হলেন পঞ্চগড় থেকে রেজিয়া ইসলাম, ঠাকুরগাঁও থেকে দ্রৌপদী বেবি আগরওয়ালা (ঠাকুরগাঁও পৌরসভার কাউন্সিলর), নীলফামারী থেকে আশিকা সুলতানা, জয়পুরহাট থেকে রোকেয়া সুলতানা, নাটোর থেকে কোহেলী কুদ্দুস (সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে), চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে জারা জাবীন মাহবুব, খুলনা থেকে রুনু রেজা, বাগেরহাট থেকে ফরিদা আক্তার বানু, বরগুনা থেকে ফারজানা সুমি, ভোলা থেকে খালেদা বাহার, পটুয়াখালী থেকে নাজনীন নাহার রশীদ।

নতুন যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আরো আছেন- ময়মনসিংহ থেকে উম্মি ফারজানা ছাত্তার, নেত্রকোনা থেকে নাদিয়া বিনতে আমিন, জয়পুরহাট থেকে মাহফুজা সুলতানা, ঝিনাইদহ থেকে পারভীন জামান, সাতক্ষীরা থেকে লায়লা পারভীন, গোপালগঞ্জ থেকে বেদৌরা আহমেদ সালাম, ঢাকা থেকে পারুল আক্তার, সাবেরা বেগম, অনিমা মুক্তি গমেজ, শেখ আনার কলি, হাছিনা বারী চৌধুরী (ঢাকা উত্তর সিটির সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর), ফরিদপুর থেকে ঝর্না হাসান, নরসিংদী থেকে মাসুদা সিদ্দিক রোজী।

আরো আছেন- টাঙ্গাইল থেকে শামসুন নাহার (আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক), গোপালগঞ্জ থেকে নাজমা আকতার, সিলেট থেকে রুমা চক্রবর্তী, লক্ষ্মীপুর থেকে আশ্রাফুন নেছা, রংপুর থেকে মোছা. নাসিমা জামান, চট্টগ্রাম থেকে শামীমা হারুন ও দিলোয়ারা ইউসুফ এবং রাঙামাটি থেকে জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা।

সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে মাত্র একটি আসন এবার শরিকদের দেওয়ার কথা বলেছে আওয়ামী লীগ। নোয়াখালী থেকে কানন আরা বেগমের নাম প্রার্থী হিসেবে তালিকায় রাখা হয়েছে। তিনি ১৪ দলের শরিক গণতন্ত্রী পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। গত সংসদে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদকে দুটি আসন দিয়েছিল। শুধু গণতন্ত্রী পার্টি পেল একটি আসন।

প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হবে।

এদিকে ১৪ মার্চ ভোটের দিন রাখা হয়েছে। কিন্তু দলীয় মনোনয়নের বাইরে কারও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না থাকায় ভোটের আর প্রয়োজন পড়ে না বলে নির্বাচন কমিশনের সূত্রগুলো জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও বলছে, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ৫০ আসনে যাদের মনোনয়ন দেবে, প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পরদিনই তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হতে পারে।

শেয়ার করুন