অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে সেই অর্থ জলবায়ু তহবিলে দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শুক্রবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে (এমএসসি) যোগ দেন। গতকাল রাতে এমএসসির মূল মঞ্চে আয়োজিত ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন তিনি। খবর বাসসের।
প্যানেল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের জন্য সম্পদের সংস্থান করা দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে যে মানবতার অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে পড়বে, তখন সংকীর্ণ স্বার্থ রক্ষার পথ অনুসরণ করলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
ছয় প্রস্তাবের প্রথম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সঠিক পথের জন্য জলবায়ু অর্থায়নের বরাদ্দ ছাড় করার সঠিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে হবে
তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ জলবায়ু তহবিলের জন্য নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে। বৈজ্ঞানিক তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে তা বছরে ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, বিশ্বকে যুদ্ধ ও সংঘাত, অবৈধ দখলদারত্ব এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে, যা গাজা ও অন্যত্র বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছেন।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলো থেকে অনেক দূরেও পড়ছে।
তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলাবায়ুর প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য অর্থায়নের তীব্র ভারসাম্যহীনতা দূর করার জন্য অভিযোজন অর্থায়নের বর্তমান পর্যায় অন্তত দ্বিগুণ করা প্রয়োজন।
এ লক্ষ্যে, অভিযোজনে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ইউরো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁকে ধন্যবাদ জানান।
চতুর্থ প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থপ্রাপ্তি সুগম করার জন্য দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর পঞ্চম প্রস্তাবে বলেন, বৈশ্বিক অর্থায়নের ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ঋণের বোঝা দূর করতে তাদের জন্য অনুদান ও সুবিধাজনক ঋণ লাভের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থপূর্ণ ফল দেখাতে হবে।
সর্বশেষ ও ষষ্ঠ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু কর্মসূচির জন্য বেসরকারি পুঁজিপ্রবাহের জন্য সরকারগুলোকে সঠিক পরিকল্পনা, নীতি ও ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব প্রকল্পের জন্য বেসরকারি পুঁজি আকৃষ্ট করার জন্য উদ্ভাবনী, মিশ্র অর্থায়নের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, এটি সুস্পষ্ট যে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের বিপুল পরিমাণ ঘাটতির কার্যকর সমাধান করা যাবে না।