পরবর্তী প্রজন্মের নিকট সুন্দর বাংলাদেশ রেখে যাওয়াই মূল উদ্দেশ্য: গণপূর্তমন্ত্রী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, ৩০ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনের নির্যাতনের কথা স্মরণ করলে কেউ বিপথগামী হবে না। অর্থ উপার্জন মুখ্য নয়, পরবর্তী প্রজন্মের নিকট একটি সুন্দর বাংলাদেশ রেখে যাওয়াই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রত্যেকটি কাজ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান ও আইন কানুন মেনে কাজ করলে সকল কাজে পাশে থাকার এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

আজ রোববার রাজশাহী সার্কিট হাউসে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর/সংস্থায় কর্মরত রাজশাহী বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার কাজে সমন্বয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, সরকারের সকল দপ্তর/সংস্থার কাজে যথাযথ সমন্বয় থাকলে দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস পাবে এবং উন্নয়ন পরিকল্পিত হবে। রাজশাহীতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর/সংস্থার কার্যক্রমের সাথে সিটি কর্পোরেশনসহ সকল প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় সাধনের জন্যে তিনি সংস্থা প্রধানদের নির্দেশনা প্রদান করেন।

মন্ত্রী বলেন সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন জননেত্রী শেখ হাসিনা ১২০% বৃদ্ধি করেছেন, তার কাছে চাইতে হয় নাই। আপনারা আপনাদের দক্ষতার যোগ্যতা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করুন। সকল কাজে জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিন। নিজেদের মধ্যে দেশপ্রেমের অনুভূতিকে জাগ্রত করুন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাত্র তিন বছরের শাসন আমলে প্রায় সকল দেশের স্বীকৃতি অর্জন সহ জাতিসংঘের বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভ করেছিলেন। তিনি সফল হয়েছিলেন কারণ তার মধ্যে দেশপ্রেম ছিল, মানুষের কল্যাণ কামনা ছিল। আপনাদেরকেও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছেন। অনেকেই বলেন সাড়ে তিন বছরে তিনি কী করেছেন? আজকের প্রজন্ম তো জানেই না তিনি আমাদের জন্য কী কী করে গিয়েছেন। শেখ মুজিব সাড়ে তিন বছরে একটি আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি রচনা করে গিয়েছেন। একটি দরিদ্র রাষ্ট্রকে স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের সবগুলো থানা ও এসডিও অফিস ছিল পাকিস্তানের তিনি এগুলোকে বাংলাদেশের থানা ও এসডিও অফিসে রুপান্তর করে ছিলেন। পাকিস্তানের সচিবালয়কে বাংলাদেশের সচিবালয়ে রুপান্তর করে ছিলেন। দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন। অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন সম্পন্ন করেন। তাঁর সময়ে সাড়ে তিন হাজার ব্রিজ কালভার্ট পুননির্মাণ করতে হয়েছে।

সরকারের সাফল্য ও উন্নয়ন তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। দরিদ্র জনগোষ্ঠী ৪০ শতাংশ থেকে নেমে বর্তমানে ২১-২২ শতাংশে নেমে এসেছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে ৬ শতাংশেরও কম মানুষ বাস করছে। ধীরে ধীরে আমরা উন্নত দেশের কাতারে যাচ্ছি। আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে বাস করছি বলে আজ দেশে সবার জন্য সব দুয়ার খুলে গেছে। এখন আর কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।

সঠিক সময়ে সকল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবাসন ও গৃহায়ন উন্নয়ন প্রকল্প কাজের জন্য ঠিকাদারের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। এক্ষেত্রে তিনি ঠিকাদারের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে কাজের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার কথা বলেন। সবাইকে তিনি বিধি-বিধান ও আইন অনুযায়ী নিজের দায়িত্ব পালনে সজাগ থাকতে বলেন।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমি কর্তৃত্ব করতে আসিনি, আপনাদের সতীর্থ হয়ে কাজ করতে এসেছি, আপনাদের কাজ দেখতে এসেছি। সুদীর্ঘ পরিকল্পনা অনুযায়ী টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।  

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শামীম আখতার, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এনডিসি এবং রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জিয়াউল হক।

অনুষ্ঠানে গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর -রাজশাহীর বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে মন্ত্রী স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং রাজশাহী বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পরিদর্শন, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী পার্কে বৃক্ষরোপণ ও রাজশাহী গণপূর্ত প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপণ করেন।

শেয়ার করুন