খেলা রংপুর রাইডার্স আর ফরচুন বরিশালের। তবে লড়াইটা যেন হয়ে দাঁড়িয়েছিল সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালের। ‘বন্ধু থেকে শত্রু’ হওয়া জাতীয় দলের এই দুই তারকার মধ্যে কখন কী ঘটে, সেটি দেখতেই উন্মুখ হয়ে ছিলেন সমর্থকরা।
লড়াইটা জমলো বেশ। তামিমকে আউট করে সাকিবের উদযাপন কিংবা সাকিব আউট হওয়ার পর তামিমের ভেংচি, বেশ উপভোগ করেছেন দর্শকরা। এমন এক ম্যাচে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনাই হলো।
রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে তামিমদের ৩ বল হাতে রেখে ১ উইকেটে হারালেন সাকিবরা। শেষ ওভারে গিয়ে রংপুর রাইডার্সের কাছে হারের হতাশায় পুড়লো ফরচুন বরিশাল। ১১ ম্যাচে এটি নবম জয় রংপুরের। অন্যদিকে বরিশালের সমান ম্যাচে পঞ্চম হার।
মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ব্যক্তিগত ৪ রানে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন জিমি নিশাম। বদলি ফিল্ডার প্রীতম কুমার সহজ ক্যাচ হাত থেকে ফেলে দেন। সেই নিশাম ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে করলেন ১৭ বলে ২৮। ওই এক ক্যাচেই যেন ম্যাচটি ছুটে যায় বরিশালের হাত থেকে।
রংপুরের লক্ষ্য ছিল ১৫২ রানের। ব্রেন্ডন কিংয়ের ঝোড়ো শুরুতে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৭৪ রান তোলে রংপুর। কিং ২২ বলে ৩ চার আর ৪ ছক্কায় ৪৫ করে ফেরার পরই যেন ছন্দ হারায় দলটি।
মিরাজ-ম্যাকয়রা চেপে ধরেন রংপুরকে। ১১৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি। জিমি নিশামের ক্যাচটা তখন নিতে পারলো ফল অন্যরকম হতে পারতো। সেটি হয়নি।
তবে শেষ ওভার পর্যন্ত গিয়েছে ম্যাচটি। দশ বল বাকি থাকতে নবম উইকেট পড়ে রংপুরের। শেষ ওভারে ২ রান লাগে রংপুরের। হাতে একটিমাত্র উইকেট। সাইফউদ্দিনের করা শেষ ওভারে শামীম পাটোয়ারী প্রথম বলে সিঙ্গেলস নিয়ে টাই করেন, পরের বলে হাসান মাহমুদের ব্যাটের কানায় লেগে চার হয়ে গেলে উচ্ছ্বাসে ভাসে রংপুর শিবির।
এর আগে আবু হায়দার রনি ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে একাই নেন ৫ উইকেট, গড়েন চলতি বিপিএলের সেরা বোলিং ফিগার।
বল হাতে আগুন ঝরানো ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে ভালো জায়গা থেকে ধস নামান আবু হায়দারই। ১০ ওভারে ১ উইকেটে ১০০ রান তুলে ফেলা দলটি ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে তুলতে পেরেছে মোটে ১৫১।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়ে ঝোড়ো সূচনা করেন তামিম ইকবাল। ৪ ওভারের ওপেনিং জুটিতে ৩৮ রান পায় ফরচুন বরিশাল। তামিম খেলছিলেন বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।
চতুর্থ ওভারে সাকিব আল হাসানের হাতে বল তুলে দেন রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। সাকিব-তামিম দ্বৈরথ দেখতে যারা মুখিয়ে ছিলেন, তাদের আশায় গুঁড়েবালি।
প্রথম বলেই তামিমকে বোকা বানান সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে ব্যাটে আলতো ছোঁয়ায় বল একদম বাতাসে ভাসিয়ে দেন তামিম।
সাকিবই ফিরতি ক্যাচটি নিতে পারতেন। তবে তিনি তাড়াহুড়ো করেননি, তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মুমিনুল হক সহজ ক্যাচটি তালুবন্দি করেন। ২০ বলে ৩ চার আর ২ ছক্কায় ৩৩ রানে থামে তামিমের ঝোড়ো ইনিংসটি। আরেক ওপেনার টম ব্যান্টন আউট হয়ে যান ২৪ বলে ২৬ করেই।
ইনিংসের ১৩তম ওভারে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় বরিশাল। এক ওভারে তিন শিকার করে বরিশালের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন আবু হায়দার রনি। ওভারের প্রথম বলে মুশফিকুর রহিম ৩ বলে ৫ করে উইকেটরক্ষক সোহানকে দেন ক্যাচ, তৃতীয় বলে বোল্ড সৌম্য সরকার (০) হন বোল্ড, পঞ্চম বলে মারকুটে মায়ার্সও দেন ফিরতি ক্যাচ।
২৭ বলে মায়ার্সের ৪৬ রানের ইনিংসে ছিল ৪টি বাউন্ডারি আর ৩ ছক্কার মার। রনির দুর্দান্ত বোলিংয়ে পরাস্ত হন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। মারতে গিয়ে শামীম পাটোয়ারীর হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি (৯ বলে ৯)।
১০ ওভারে ১ উইকেটে বরিশালের স্কোর ছিল ১০০। শেষ ১০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে তারা তুলতে পেরেছে মাত্র ৫১ রান!