গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, আমাদের প্রত্যাশা, এই মেধাবৃত্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আগামী দিনে নতুন প্রজন্ম মেধাদীপ্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠবে। আমরা চাই, আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে দেশপ্রেমী নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক। তারা দেশের জন্য অবদান রাখুক। সব ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান যাতে সুউচ্চে উঠিয়ে আনা যায়, তারা যেন সে চেষ্টা করে।
মন্ত্রী বলেন, এমন একটি আবহ ও পরিবেশ তৈরি করার জন্য ২০০৪ সালে প্রথম এই পরীক্ষামূলক বৃত্তি শুরু করি। এখন এটি পরীক্ষামূলক নয়, এর নিজস্ব তহবিল আছে। নিজস্ব গঠনতন্ত্র আছে, সবকিছু আছে। এটা একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর এমন একটি দেশ, যে দেশটির সঙ্গে রক্তমূল্য লেখা আছে। ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছে। দুই থেকে আড়াই লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছে। এই চেতনাকে যুক্ত করে যে ভাবধারা ও সংস্কৃতি গড়ে উঠবে, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাতে আমাদের নাগরিকেরা ভবিষ্যতে বেড়ে ওঠে, এ জন্যই আমাদের এই পদক্ষেপ।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব (অনার্স) কলেজ প্রাঙ্গণে চিনাইর শিশু মেধাবৃত্তি ফাউন্ডেশন আয়োজিত ১৯তম শিশু মেধাবৃত্তি প্রদান ও শিশু মেলায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী। এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, এখন তো পাবলিক পরীক্ষা নেই বললেই চলে। উঠিয়েই তো দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির যে পরীক্ষা হতো, আমি এটার পক্ষে। এখনো পক্ষে। সরকার বা যাঁরা বড় বড় শিক্ষাবিদ আছেন, তাঁরা কেন এই পরীক্ষা উঠিয়ে দিয়েছেন, আমি জানি না। উঠিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এই বড় বড় শিক্ষাবিদের সংকীর্ণ মানসিকতা।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, মেধাবৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা পরীক্ষা পদ্ধতির একটি মানদণ্ড দাঁড় করিয়েছি। এখানে কাউকে বলতে হয় না, তোমরা কেউ নকল করবা না। এমনিতেই তারা নকল করে না। এখানে ছোট যে শিশু ক্লাস ওয়ানে পড়ে, সে এসে পাবলিক পরীক্ষার মতো পরীক্ষা দিচ্ছে। একটি আনন্দঘন পরিবেশ রাখা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষাকে আমরা ভীতিকর কোনো প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলিনি। শিক্ষা মানে আনন্দ, ফুর্তি। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা। আনন্দঘন পরিবেশে পরীক্ষা দিয়ে শিশুদের মন থেকে পরীক্ষাভীতি দূর হচ্ছে।
তিনি বলেন বলেন, এই মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে ইতোপূর্বে অনেক প্রতিথযশা ব্যক্তিকে অতিথি হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এবং তাদের শিক্ষা ও কর্মের দ্বারা যাতে শিশুরা অনুপ্রাণিত হয়ে ভবিষ্যৎ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে। প্রত্যেকটি শিশুকে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করার মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠতে হবে। তবেই বাংলাদেশ প্রকৃত সোনার বাংলা হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিতি লাভ করবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষা মানুষের সকল সুযোগের দোয়ার উন্মোচন করে, মানুষের অন্তর বিকশিত করে ও প্রতিষ্ঠা লাভের ভিত্তি তৈরি করে। শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করেছেন। তিনি বিপুল সংখ্যক স্কুল কলেজ জাতীয়করণ ও এমপিওভুক্ত করেছেন। নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে তিনি ডিগ্রি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করেছেন এবং উপবৃত্তি ব্যবস্থা চালু করেছেন। ইতোমধ্যে দেশ ও জাতি এসব সুদূরপ্রসারী উদ্যোগের সুফল পেতে শুরু করেছে।
মেধাবৃত্তি প্রদান ও শিশু মেলা অনুষ্ঠানে মাউশির প্রাক্তন মহাপরিচালক (গ্রেড-১), চিনাইর মেধাবৃত্তি ফাউন্ডেশনের সভাপতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ফাহিমা খাতুন সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন তুর্কমেনিস্তান থেকে শুরু করে তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও আফগানিস্তান হয়ে ৭ হাজার বছরের বর্ণিল পথ পরিক্রমায় বাংলা ভাষা এতদঞ্চলে বিকাশ লাভ করেছে। বাঙালি ও বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ববোধ থেকেই ভাষা আন্দোলন মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং একটি উন্নত জসমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রচেষ্টা চলমান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে সকলের প্রচেষ্টায় একটি উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ফাহিমা খাতুন বলেন, আমরা যে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এবং সুন্দরভাবে শিশু মেধাবৃত্তির আয়োজন করতে পারছি, তাতে মেধাবীরা যেমন বের হয়ে আসছে, মেধাবীদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে, তেমনি কিন্তু আমাদের যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং গ্রহণযোগ্যতা এটাও সবার কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে। যার ফলে প্রতিবছর আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ে। এবছর ১৩১টি প্রতিষ্ঠান এখানে অংশ নিয়েছে। আমাদের ইচ্ছা আছে আগামীতে আরেকটু বড় করে বার্ষিক সাধারণ সভা করব। ২০০৪ সালে আমরা শুরু করেছিলাম, সেই বছর যারা বৃত্তি পেয়েছিল তাদেরকে নিয়ে আমরা একটি সুন্দর অনুষ্ঠান করব। আমরা দেখতে চাই আমাদের মেধাবৃত্তি প্রদান আয়োজনটা সার্থক হয়েছে কিনা।
আয়োজকেরা জানান, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সদর উপজেলার চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব (অনার্স) কলেজে শিশু মেধাবৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় জেলার ৯টির মধ্যে ৮টি উপজেলার ১৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৫৫৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। গত ৩১ ডিসেম্বর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া ৭৯ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ৩ হাজার টাকা করে ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পাওয়া ১৫৬ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। তা ছাড়া মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী একজনকে দেওয়া হয় উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ডেসটিনেশন অ্যাওয়ার্ড এবং এককালীন ১২ হাজার টাকা। শিশু মেধাবৃত্তি ও শিশু মেলাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশ এলাকায় লোকজ মেলা বসেছিল।