অচিরেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা হবে: গণপূর্তমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, শেখ হাসিনা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলেন, তখন এটি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা বাংলাদেশের মানুষ ঠাট্টা-মশকরা করতো কিন্তু ইতোমধ্যে তাঁর নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়ে গিয়েছে। এখন তিনি স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন, সেটিও অচিরেই বিনির্মাণ করা হবে ইনশাআল্লাহ। স্মার্ট বাংলাদেশ হবে আরও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমন্বিত। 

৪ মার্চ নিউইয়র্কের গুলশান ট্যারেসে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সোসাইটি অব ইউএসএ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া কমিউনিটি অব নর্থ আমেরিকা ইনক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সাথে সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়াও যাতে এগিয়ে যেতে পারে, সেই কাজটি আমি করে যেতে চাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ও বিজয়নগরের মাঝামাঝি যে জায়গাটি আছে, সেখানে নতুন উপশহর গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছি, ইনশাআল্লাহ শিগগিরই আমরা এটি বাস্তবায়ন করবো। আমি বলে রেখেছি যে সেখানের একটি অংশ প্রবাসীদের জন্য চিহ্নিত করে রাখতে, যাতে প্রবাসীরা প্লট পায়। আমরা আরেকটি হাউজিং প্রকল্প করছি, সেখানেও প্রবাসীদের জন্য আলাদা কোটা সংরক্ষণ করা হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করতেই সাধারণ মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন। আর এটি এজন্য হয়েছে যে, আমার নেত্রী- জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে অনেক স্নেহ করেন এবং আমি যদি এখানকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হতে পারি তাহলে তিনি এ অঞ্চলের উন্নয়নের ব্যাপারে অনেক বেশি সহযোগিতা করবেন।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আপনারা বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে তাকান এবং ১৫ বছর পূর্বের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে তাকান। এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ খোঁজে পাবেন। এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে কোনো ভাঙাচোরা কোনো স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা খোঁজে পাবেন না। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে একটি রেলওয়ে ওভারপাস, শেখ হাসিনা সড়ক, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোঁজে পাবেন। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সদর, বিজয়নগর, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুরসহ সমস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চেহারা পাল্টে দেওয়া হয়েছে।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হারাম হয়ে গিয়েছিল, এটিকে পুনরায় চালু করেছি। এখন লক্ষ লক্ষ মানুষ নৌকা বাইচ উপভোগ করতে যায়। এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে আবার সঙ্গীতের মূর্ছনা হয়, পুতুল নাচ হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে এখন শিক্ষা ও সংস্কৃতির নতুন আবহ তৈরি হয়েছে, আমরা এটাকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

তিনি বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আমি বলি, আপনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা না বলে-আপনি আইন মেনে চলেন। কেউ যদি আইন মেনে চলেন, তার পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব না। কর্মকর্তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করলে দুর্নীতি থাকবে না। আমি আইনের শাসনে বিশ্বাস করি এবং গণতন্ত্রে যারা বিশ্বাস করেন তারা সকলেই জানেন, আইনের শাসন হলো গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।

তিনি আরও বলেন, টাকা পাচার যাতে রোধ হয় সেজন্য আমরা বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। শিগগিরই অফশো ব্যাংকিং চালু হয়ে যাবে এবং টাকা পাচার রোধে অফশো ব্যাংকিং শক্ত ভূমিকা পালন করতে পারবে। পাচারকৃত টাকা দেশে ফেরত যাতে আনা যায়, সেই লক্ষ্যে দশটি দেশের সঙ্গে আমরা চুক্তি সম্পন্ন করেছি।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমরা আপনাদের ভালোবাসা চাই। আপনারা টাকা পাচার রোধ করতে বলেছেন, সেই সাথে আমি বলব- আপনারা যে টাকা দেশে পাঠান, সেটি যদি বৈধ পথে তথা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠান তাহলে আমরা খুশি হবো।

বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বলেন, আপনারা যেসমস্ত গল্প গুজব শুনেন, যেমন- আজকেই সরকার তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এধরনের সরকার শেখ হাসিনা পরিচালনা করেন না, আমরা যারা তাঁর সহকর্মী আছি তারাও এধরনের সরকারে করি না। আমার সরকারের কোনো দুর্বলতা নাই। কেউ বক্তৃতা দেওয়ার জন্য কিংবা নির্বাচন দাবি করার জন্য গ্রেফতার হয়না, শুধু আইন ভঙ্গ করার কারণেই গ্রেফতার হন। সুতরাং আপনারা এসমস্ত গুজবে কান দিবেন না।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের রিজার্ভের একটি ডলারও ছিল না। কেউ যদি বলে আমাদের টাকা ছিল, তা-ও ছিল না, কেননা আমরা পাকিস্তানের টাকা দিয়ে চলতাম, বাংলাদেশ ব্যাংক গঠনই হয়নি তখন। আমাদের খাবার ছিল না। এক কোটি মানুষ বৈদেশিকভাবে এবং আড়াই কোটি মানুষ অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু ছিল। একটি ডলার না থাকা সত্ত্বেও সবকিছুই বঙ্গবন্ধু ম্যানেজ করেছিলেন। তখন যদি আমরা পারি, এখন পারব না কেন? অবশ্যই পারব।

মন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে এক কেজি চাল কেনার পরে হাতে অবশিষ্ট টাকা থাকতো না। এখন আর ঐ অবস্থা নাই। এখন সকলের আয় বেড়েছে, পাঁচশত টাকার নিচে দিনমজুর পাওয়া যায় না। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, কনস্যাল্ট জেনারেল নাজমুল হুদা প্রমুখ।

শেয়ার করুন