বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি জয়ের কিছু অলিখিত পূর্বশর্ত থাকে। এই যেমন বোলাররা আঁটসাঁট বোলিং করবেন। সেটা আগে বোলিং করে হোক কিংবা পরে। রান হবে দেড় শর আশপাশে। জয়ের নায়ক হবেন মূলত বোলারদেরই একজন। গত এক-দেড় বছরে এই প্রথায় একটু একটু করে বদল আসছে। এখন দলের মানসিকতা—প্রতিপক্ষ যত রানই করুক, পরে ব্যাটিং করে তা টপকে যাব। গত বছরের শুরু থেকে বাংলাদেশের ৮টি টি-টোয়েন্টি জয়ের ৫টিই এসেছে রান তাড়া করে। চলমান শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রথম ম্যাচেও তাদের ২০৬ রান প্রায় টপকে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
আজ বুধবার নিজেদের রান তাড়ার সামর্থ্যে আস্থা রেখে আরও একবার সেই লঙ্কানদেরই ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। বোলাররা লঙ্কানদের ৫ উইকেটে ১৬৫ রানে আটকে দেওয়ার পরই মনে হচ্ছিল, আজ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বড় কিছুর উৎসব হতে পারে। রান তাড়ায় লিটন-সৌম্যর ৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটির পর আর মনেই হয়নি বাংলাদেশ ম্যাচটা হারতেও পারে।
নাজমুল ও তাওহিদ হৃদয় বাকি পথ পাড়ি দিয়েছেন ৮৭ রানের অপরাজিত জুটিতে। দুজনের সৌজন্যে ১১ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটের জয়ের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজের স্কোরলাইনটা হয়ে গেল ১-১। ১৬৬ বা এর বেশি রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে এ নিয়ে তৃতীয় জয় বাংলাদেশের।
প্রতি ওভারে ৮ রানরেটের ম্যাচে যেমন শুরু দরকার, ঠিক তেমনই শুরু পেয়েছে বাংলাদেশ। লিটন দাস ছিলেন চেনা ছন্দে, ধুঁকতে হয়েছে সৌম্য সরকারকে। তবে ভাগ্য পক্ষে থাকায় রক্ষা। ইনসাইড এজ, আউটসাইড এজ, মিস টাইমড পুল—এত কিছুর পরও ক্রিজে তিনি টিকে ছিলেন। লঙ্কানদের দুর্ভাগ্য, গতি কম হলেও তার ব্যাট থেকে রান আসছিল। তাতে জুটিও বড় হচ্ছিল। সৌম্যর পক্ষে ছিল স্নিকো মিটারও।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে বিনুরা ফার্নান্ডোর বলে পুল শট খেলতে গিয়ে ব্যাট-বলে হয়নি সৌম্যর। কিন্তু লঙ্কানদের আবেদনে আম্পায়ার গাজী সোহেল আউট দিয়ে দেন, তার মতে বটম-এজড হয়েছিলেন সৌম্য। সৌম্য অবশ্য বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই রিভিউ নিয়েছিলেন। আলট্রা-এজে দেখা গেছে স্পাইক। তবে টেলিভিশন আম্পায়ার মাসুদুর রহমান বলেছেন, স্পাইক দেখানোর সময় বল ও ব্যাটের মধ্যে ‘গ্যাপ’ দেখেছেন তিনি। আউট ভেবে প্রায় বাউন্ডারির কাছে পৌঁছে যাওয়া সৌম্য ফিরে আসেন আবার। স্বাভাবিকভাবেই এতে অসন্তুষ্ট হন লঙ্কানরা।
১০ বলে ১৪ রান করা সৌম্য এরপর টিকে ছিলেন সপ্তম ওভার পর্যন্ত। আউট হয়েছেন ২২ বলে ২৬ রান করে, দলের রান তখন ১ উইকেটে ৬৮। গত বছরের জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর এটিই টি-টোয়েন্টিতে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের প্রথম ৫০ ছাড়ানো জুটি।
আরেক ওপেনার লিটন আউট হয়েছেন দলকে আরেকটু এগিয়ে দিয়ে। তার ২৪ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ১৫০ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস বাংলাদেশকে নিয়ে যায় ৯ ওভারে ৮৩ রানে। তার সৌজন্যেই আস্কিং রানরেটের হাঁসফাঁস থেকে মুক্তি পায় বাংলাদেশ। নাজমুল ও হৃদয় তাই তাদের ইনিংসের শুরুতে খেলেছেন ওয়ানডে মেজাজে। দুজনের যুগলবন্দীতে আসে ৫৫ বলে ৮৭ রান। ৩৮ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৩৯ স্ট্রাইক রেটে ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ছন্দে ফেরার আভাস দিলেন নাজমুল। হৃদয় অপরাজিত ছিলেন ২৫ বলে ৩২ রানে। দুজনের সৌজন্যে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে যায় ১৮.১ ওভারে।